নিদি কি সত্যিই অনিমেষকে ভালবেসে ছিল?
অন্ধকার ঘরে অনিমেষ ঘুম থেকে উঠে অনুভব করল চিত হয়ে শুয়ে আছে।
ধ্যাত মশা কামড়াচ্ছে। এত মশা কই থেকে যে আসে। হাত তুলে চুলকাতে গিয়ে বুঝল তার দুই হাত বাঁধা। পা দুইটাও একটু ফাঁকা করে বাঁধা আছে অনুভব করল।
আচ্ছা আজকে কি আমার বার্থ ডে ? ফাজিল বন্ধুগুলো আর ভাল হল না। প্রতিবার জন্মদিন আসলে এরা অদ্ভুত কর্মকান্ড করে চমকে দেয়। আচ্ছা তাই বলে হাত-পা বেধে রাখতে হবে !
আচ্ছা কি ব্যাপার এটা তো আমার রুম না । কেমন মেয়েলি পারফিউমের গন্ধ আসতেছে !
হুট করে মনে পড়ল গতকাল নিদি’র সাথে দেখা করতে বনানী গিয়েছিলাম। দুইজন মিলে খুব আয়েশ করে কফি খাচ্ছিলাম। এর পরে কি ? আর খেয়াল করতে পারছি না কেন ?
এমন সময় রুমে খুব অল্প আলোর একটা বাল্ব জ্বলে উঠল। আরে এই তো নিদি। তার হাত দু’টো পেছনে রাখা। হেটে আসছে যেন একটি পরী ! আমি ভুলে গেলাম আমার হাত-পা বাঁধা । কী কমনীয় লাগছে তাকে। একটা মেয়ে এত সুন্দর হতে পারে ! নড়তে গিয়ে খেয়াল হল আমার হাত পা বাঁধা।
– এই নিদি কি ব্যাপার আমার হাত পা বাঁধা কেন? যাক বাঁচা গেল তুমি এসেছে। আমার হাত পা খুলে দাও।
নিদি হাত দুটো সামনে নিয়ে আসল। এক হাতে একটা কাপড়ের টুকরা অন্য হাতে একটা হকিস্টিক। কোন কথা না বলে আমার মুখের কাপড়ের টুকরা ঢুকিয়ে দিল।
শুরু হল অকথ্য অত্যাচার । মাথা ফেটে গেল। হাতের হাড় বোধ হয় ভেঙ্গে গেছে। প্রচন্ড ব্যাথায় হাউ মাউ করছি । কিন্ত মূখ দিয়ে কোন শব্দ বের হচ্ছে না। কয়েক মিনিট পরে বোধ হয় জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
দুই মাস আগে ফেসবুকে নিদি’র সাথে পরিচয়। নিদির সাথে পরিচয় হবার পরে আগের সেই লাজুক ছেলেটা কেমন বদলে গেল। রাত জেগে কত কিছু শেয়ার করা, দুই জনের লাইফ স্টাইল, প্রতিদিনের রোজনামাচা।
বন্ধু হিসেবে শুরু হলেও সময় লাগে নি পরস্পরের প্রতি দুর্বল হতে। এক মাসের মাথায় নিদি অনিমেষকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। অনিমেষ ইতিমধ্যে নিদির মাঝে হারিয়ে গেছে । সেই থেকে শুরু। গত একমাস চুটিয়ে প্রেম করার পরে প্রথম দেখা করতে যাওয়া।
অনিমেষের প্রথম প্রেম তাই একটু বেশিই উত্তেজিত। দু’জন মিলে ঠিক করে বনানী ১১ নাম্বারে আলফ্রেস্কোতে দেখা করবে।
ধীরে ধীরে অনিমেষের জ্ঞান ফিরে আসে। প্রচন্ড ব্যাথায় অনিমেষের মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। দিন -রাতের হিসেব নাই। মাথা ধপ ধপ করছে। ডান হাতে মনে হচ্ছে কেউ হাতুড়ি দিয়ে পিটাচ্ছে। সারা গায়ে অসহ্য যন্ত্রণা।
হঠাৎ মাথায় উপর ২৫০ ওয়াটের ১০ টা বাল্ব জ্বলে উঠে । চোখ বন্ধ করেও আলোর তীব্রতারোধ হচ্ছে না। মাথার নার্ভ ছিড়ে যাবার জোগাড়। হুট করে যেমন লাইট জ্বলে উঠেছিল তেমনি হুট করে নিভে গেল। চার দিকে নিকষ কালো অন্ধকার। আরেক নরক !
অনিমেষের চিন্তা শক্তি লোপ পাচ্ছে । বার বার সৃষ্টিকর্তার কাছে নিজের মৃত্যুর জন্যে প্রার্থনা করছে। কান্না করতে করতে চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। শুধু ফুপানোর শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।
এমন সময় এক চিলতে আলো জ্বলে উঠল। ঐ তো নিদি তার হাতে কিসের একটা ইলিক্ট্রিক বোর্ড ।
-কি নবাবের ঘুম ভাঙল ? এত বেশি ঘুমালে তো চলবে না !
অনিমেষ চুপচাপ নিদির কর্মকান্ড দেখছে। হাতের ইলিট্রিক বোর্ড থেকে দুইটা তার ভাংগা হাতে লাগিয়ে নিদি এক দৃষ্টিতে অনিমেষের দিকে তাকিয়ে আছে।
অনিমেষ নিদির হাতে বোর্ডটার দিকে তাকিয়ে একটা লাল আর একটা সবুজ বাটন দেখতে পেল। তখনই নিদি লাল বাটনে চাপ দিল। অনিমেষের মনে হল লাফ দিয়ে সে ২ ফিট উপরে উঠে গেছে। হাতের স্ট্র্যাপগুলো কেটে বসে গেছে। ২০ সেকেন্ডেই অনিমেষ জ্ঞান হারাল।
আলফ্রেস্কোতে নিদি অনিমেষের কাধে মাথা রেখে কাঁদছে আর তার একাকিত্ব বর্ণনা করছে। তার বাবা প্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ী মানুষ। মায়ের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তার মা’ও অন্য একজনকে বিয়ে করে নিদিকে ফেলে চলে গেছে। নানা-নানীর কাছেই নিদি মানুষ হয়। ছোট চাচ্চু প্রতিমাসে একটা এমাউন্ট নিদির জন্যে পাঠায়।
ধীরে ধীরে অনিমেষ চোখ খুলল। প্রচন্ড যন্ত্রনায় ফুপাচ্ছে। দেখে নিদি তার পাশে বসে আছে। নিদির চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছে। মুখে কাপড় দেওয়া থাকলেও আজ হাত-পা খোলা। হাত পা খোলা থাকলে কি হবে অনিমেষের নড়ার মত শক্তি অবশিষ্ট নেই।
কাঁদতে কাঁদতে নিদি অনিমেষের গলায় একটি রশি পড়িয়ে দেয়। মাথা কাত করে অনিমেষ দেখে রশিটা ফ্যানের সাথে বাঁধা ! অনিমেষ নিদির দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে টপ টপ করে পানি পড়ছে।
চিৎকার করে নিদি বলছে
-আমি পুরুষ জাতিকে ঘৃণা করি। একবার না দুই দুই বার পুরুষকে বিশ্বাস করে ঠকেছি। দুইটা ছেলেই এক সময় আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। এর পর থেকে আমি ভয়ংকর হয়ে উঠি। এর আগে বার জনকে তিল তিল করে নিত্য নতুন কায়দায় হত্যা করেছি।
নিদি কাঁদছে ।
– জান, অনিমেষ আমি বোধ হয় সত্যিই তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। না অনিমেষ ,পুরুষের জন্যে আমার ভালোবাসা জন্মাতে পারে না।
অনিমেষ প্রচন্ড যন্ত্রণা ভুলে গেছে , তার চোখ দিয়ে নিদি’র জন্যে পানি পড়ছে।
– অন্যদেরকে কমপক্ষে ৭ দিন বাঁচিয়ে রেখেছি। আমি তোমাকে ভালবাসি অনিমেষ আমি তোমাকে ভালবাসি। আমি তোমার যন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছি না। তাই তোমাকে তৃতীয় দিনেই মুক্তি দিচ্ছি। ওপারে ভাল থেকো অনিমেষ, আই লাভ ইউ।
#সাইকো_থ্রিলার ০০০০.০০০৩