মিল্কিওয়ে সৌরজগতের ধারক
মহাকাশ বিজ্ঞানের প্রায় তেমন কিছুই জানি না । এর পরেও আলোকপাতের চেষ্টা। সৌরজগত নিয়ে সম্ভবত সবারই ধারনা আছে ধরে নিচ্ছি। সৌরজগতের মূলকেন্দ্র হল নক্ষত্র সূর্য। এই রকম হাজার হাজার নক্ষত্র নিয়ে এক একটি গ্যালাক্সি বা ছায়াপথ এর সৃষ্টি। আমাদের সৌরজগত যে ছায়াপথের অংশ সেটি হল মিল্কিওয়ে । মিল্কিওয়ে সম্পর্কে জানার পূর্বে গ্যালাক্সি নিয়ে আলোকপাত করব।
মহাবিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অংশ হচ্ছে গ্যালাক্সি।মহাবিশ্বের আকৃতি বা আকার নিয়ে এখনো তেমন প্রতিষ্ঠিত তথ্য পাওয়া যায় না । একমাত্র মহাপক্রামশালী আল্লাহই এর ভাল জানেন।বিগ ব্যাং তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্বের সম্পসারন চলছে। হয়ত দেখা যাবে মহাবিশ্বের এই সম্প্রসারন চলতেই থাকবে গ্যালাক্সিগুলো পরস্পর থেকে আরো দূরে সরতে থাকবে , সরতে সরতে হয়ত একদিন অসীমে মিলিয়ে যাবে। আবার হতে পারে সম্প্রসারন হতে হতে একটা পর্যায়ে এসে ক্রমে স্থিমিত হয়ে আসতে থাকবে, স্তিমিত হতে হতে বন্ধ পরে শুরু হবে আবার উল্টা প্রসেস। সংকোচন চলতে চলতে এক সময় হয়ত গ্যালাক্সিগুলো চলে আসবে পরস্পরের খুব কাছাকাছি। তারপর ধাক্কা খেতে থাকবে একে অপরের সাথে। এমনি হয়ত ধাক্কার সময়টাই হবে কেয়ামত।
গ্যালাক্সি হচ্ছে একটি বৃহৎ সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা যা নক্ষত্র, তারা, আন্তঃনাক্ষত্রিক গ্যাস ও ধূলিকণা, প্লাসমা এবং প্রচুর পরিমাণে অদৃশ্য বস্তু দ্বারা গঠিত। অনেক গুলো নক্ষত্র মিলে এক একটি গ্যালাক্সি তৈরি হয়। সাধারনত একটি গ্যালাক্সি দশ মিলিয়ন হতে একশ মিলিয়ন নক্ষত্র বহন করতে পারে ।ছায়াপথ নানা আকার আকৃতির হতে পারে।এর মাঝে উপবৃত্তাকার,কুণ্ডলাকার,সর্পিল অথবা অনিয়মিত হল উল্লেখযোগ্য ।ধারনা করা হয় যে,মহাবিশ্ব সৃষ্টির দুই থেকে তিন বিলিয়ন বৎসর পরে বেশির ভাগ ছায়াপথ একই সাথে সৃষ্টি হয়েছিল।মহাবিশ্ব সৃষ্টির প্রথম ৩ মিনিটে উৎপন্ন হাইড্রোজেন এবং হিলিয়াম মেঘ হল নতুন ছায়াপথ গঠনের উপাদান। সৃষ্ট এ আদিম মেঘ নিজ মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে সঙ্কুচিত হবার সাথে সাথে শত শত বিলিয়ন গোলাকৃতির গ্যাসীয় পিন্ড ঘনতর হতে থাকে । মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে সঙ্কুচিত হয়ে এবং অন্তঃস্থিত গ্যাসীয় পদার্থের তাপমাত্রা বেশ কয়েক দশেক মিলিয়ন ডিগ্রি পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলে হাইড্রোজেন ভেংগে যায় এবং হিলিয়াম তৈরি হয় ও এ পারমানবিক ফিউশান বিক্রিয়ার দ্বারা বিশাল ধরনের শক্তি নিঃসরিত হয়। এভাবে শক্তি নিঃসরন করে গ্যাসীয় গোলকগুলো পরিনত হয় নক্ষত্রে।আর গ্যাসীয় গোলকগুলো তার সমস্ত গ্যাসের কতটুকু অংশ নক্ষত্রে পরিণত করতে পারলো তার উপর নির্ভর করে তার আকৃতি।
মেঘ মুক্ত আকাশের দিকে তাকালে গভীর রাতে আকাশের হাজারো তাঁরা দেখে আমরা বিমহিত হই। বিশাল মহাবিশ্বের কোথায় আমাদের অবস্থান খুব জানার ইচ্ছে জাগে । এই মহাবিশ্বে আছে অগণিত গ্যালাক্সি । তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি গ্যালাক্সির নাম “ <h2>মিল্কিওয়ে </h2>”। নীল আকাশের পৃথিবীর সূর্য নামক নক্ষত্র এই মিল্কিওয়ে র’ই একটা অংশ। গভীর রাতে চাঁদহীন মেঘমুক্ত আকাশের তাকালে আকাশের মধ্য দিয়ে এক দিগন্ত থেকে আরেক দিগন্তে আলোর এক সুরু অস্পষ্ট কুয়াশার মত ধারা চলে গেছে সেটিই হল মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গা ছায়াপথ।
ধারনা করা হয় মিল্কিওয়ের ব্যাস ১০০০০০ আলোকবর্ষ ( আলো এক বছরে যে পরিমান পথ চলে তাকে আলোকবর্ষ বলে) উল্লেখ্য আলোর বেগ প্রতি সেকেন্ডে ৩০০০০০ কিঃ মিঃ।তাহলে নিশ্চয় বুঝা যাচ্ছে কতটা বিশাল এই ছায়াপথ।আর এর কেন্দ্র থেকে আমাদের সূর্যের দূরত্ব আনুমানিক প্রায় ৮.৫ কিলোপারসেক (৩.২৬ আলোকবর্ষ=১ পারসেক এবং ১০০০ পারসেক=১ কিলোপারসেক) ! ! যদি মিল্কিওয়ে এর ব্যাসকে আমরা আপেক্ষিকভাবে ১০০ মিটার ধরি তাহলে আমাদের সোলার সিস্টেম ১ মিলিমিটারের বেশি হবে না এবং আমাদের পার্শ্ববর্তী নক্ষত্র ‘প্রক্সিমা সেন্টরি’র দূরত্ব হবে মাত্র ৪.২ মিলিমিটার ! মিল্গিওয়ের ভর মোটামুটি ৫×১০^১১ সৌরভরের সমান ।
মিল্কিওয়ে বা মহা গঙ্গা হচ্ছে একটা স্পাইরাল বা সর্পিলাকার ছায়াপথ। সাধারণত সর্পিলাকার গ্যলাক্সিগুলো দেখতে সুন্দর হয় । তবে আমাদের এই ছায়াপথ এক বিশেষ ধরণের স্পাইরাল গ্যালাক্সি । সাধারণ স্পাইরাল গ্যালাক্সির বাহুগুলো অসংখ্য তারার সমন্বয়ে গঠিত একটা গোলকীয় কাঠামোকে কেন্দ্র করে ঘোরে । কিন্তু, এই গ্যালাক্সিটি তার ব্যাতিক্রম । অসংখ্য তাঁরা ও গ্যাসের সমন্বয়ে তৈরি একটি আয়তাকার কাঠামোকে কেন্দ্র করে ঘুরছে এটি ! !
ধারণা করা হয় আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে রয়েছে অত্যন্ত ভারি একটি ব্ল্যাকহোল । যার ভর অনেক অনেক বেশি, প্রায় ৪০০০,০০০টি সূর্যের ভরের সমান বলে ধারনা করা হয় । যদিও বিজ্ঞানীরা পুরুপুরি নিশ্চিত নন, তবুও তারা এটি ধারনা করেছেন এর প্রচণ্ড রকম মহাকর্ষ বলের কারনে । এই প্রচন্ড বলের কারনে কেন্দ্রের নক্ষত্রগুলো তাদের কক্ষপথে প্রতি সেকেন্ডে হাজার হাজার কিলোমিটার বেগে ছুটছে । মনে করা হয়, সব গ্যালাক্সির কেন্দ্রেই একটি করে সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল থাকে । ব্ল্যাক হোলটি যেখানে অবস্থিত তাকে বলা হয় গ্যালাক্টিক সেন্টার অথবা গ্যালাক্সীর কেন্দ্র বিন্দু । আমাদের সুর্য এই গ্যালাক্সির কেন্দ্র থেকে মোটা মুটি দূরত্বেই অবস্থান করছে । আমাদের কে কিছুটা সৌভাগ্যবান বলা চলে যে আমরা এই গ্যালাক্সীর এমন একটি অবস্থানে অবস্থান করছি যেটি গালাক্সীর কেন্দ্রের খুব কাছেও নয় আবার খুব দূরেও নয় । মনে করা হয় কেন্দ্রের খুব কাছে অথবা খুব দূরে হলে হয়তো পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বলে কোন কিছুই থাকতো না ! ! সৃষ্টিকর্তার কি অসীমকৃপা আমাদের প্রতি। আফসোস এর পরেও আমরা তার কথা কৃতজ্ঞতা ভরে স্মরন করি না।
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে প্রায় ১০০-৪০০ বিলিয়ন নক্ষত্র এবং প্রায় ১০০-৪০০ বিলিয়ন গ্রহ আছে বলে মনে করা হয় ।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সী আর চার বিলিয়ন বছরের মধ্যেই আমাদের সব চেয়ে কাছের গালাক্সী এন্ড্রোমিডার সাথে ধাক্কা খেতে যাচ্ছে । শুধু তাই নয় ধাক্কা লাগার পরেই দুটি গ্যালাক্সী একিভূত হয়ে যাবে ধারনা করা হয় । তবে ভয়ের কিছু নেই , আমাদের সৌর জগত এবং পৃথিবীর কিছুই হবে না বলে বিজ্ঞানীদের ধারনা। তত দিন পর্যন্ত আমরা থাকছি না।:P । শুধু নতুন মিলিত গ্যালাক্সীর কোন একটি অংশে হয়ত আমার ঠাই পেতে পারি।
এন্ড্রোমিডার সাথে ধাক্কার এই ভিডিওটি দেখতে পারেন ইচ্ছে করলে