মাকড়শাভীতি বা এরাকনোফোবিয়া
মাকড়শা প্রথম স্থলচর প্রাণীদের অন্যতম। মাকড়শা অমেরুদন্ডী শিকারী কীট বিশেষ যার রয়েছে আটটি পা ! মাকড়সার একটি অন্যতম বিশেষ গুণ হল এরা জাল তৈরি করে এবং জালের মাধ্যমে অন্যান্য কীট-পতঙ্গ ইত্যাদি শিকার করে।
পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত জানা ৩৭,২৯৬ প্রজাতির মাকড়শা পাওয়া গেছে বলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। । প্রতিবছরই নতুন নতুন প্রজাতির বর্ণনা হচ্ছে। মেরু অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর সর্বত্র এদের দেখা মিলে, তুন্দ্রা থেকে ক্রান্তীয় নিম্নাঞ্চলের বনভূমিতে, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,০০০ মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত আপনি এদের পেতে পারেন। ।
আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত মোট ৪১২ প্রজাতির মাকড়সা সন্ধান পাওয়া গেছে।
আমাদের মধ্যে কেউ কেউ দেখা যায় হঠাৎ করে কার্পেটের উপর , সোফার উপর বা দেওয়ালের উপর মাকড়শা দেখে আঁতকে উঠেন নিজের অজান্তেই যা মাকড়শাভীতি নামে পরিচিত।
Arachnophobia বা এরাকনোফোবিয়া শব্দটি অনেকের কাছেই নতুন মনে হতে পারে। সহজ কথায় এরাকানোফোবিয়ার মানে হল মাকড়শা ভীতি। এটি একটি রোগ হিসেবেও অনেকে চিহ্নিত করেন। একটি জরিপে দেখা গেছে প্রায় ৫০% এর মত মেয়েলোক এবং ১৮% এর মত ছেলে এই রোগে আক্রান্ত।
এই সমস্যার তেমন কোন উল্লেখযোগ্য কারন অবশ্য নেই। দেখা গেছে পরিবারের কিংবা প্রিয়জনের কেউ অথবা বন্ধু-বান্ধবদের মধ্য থেকে ভয় পায় তাদের কাছ থেকে সেটা শুনতে শুনতে এক সময় নিজের মনে এই রোগটা বাসা বাধে। অনেকটা সংক্রমণের মত বিশেষ করে মেয়েরাই আক্রান্ত হয় বেশি। আসলে এটা একটা মনোরোগ ছাড়া আর কিছুই না। 😛
এবার আশা যাক কিভাবে এটা দূর করা যায় । নিচের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন
(১) এমন কাউকে দেখুন যে মাকড়শাকে ভয় পায় না । মাকড়শা দেখে তার অনুভুতিগুলো লক্ষ্য করুন। মাকড়শার দিকে না তাকিয়ে তার দিকে তাকান। প্রয়োজনে কাউকে বলতে পারেন যে মাকড়শাকে ভয় না সে যেন আপনার সামনে এসে মাকড়শাকে ফেস করে বা ধরে।
(২) ভয়ের মোকাবেলা করুন । একটা মাকড়শা দেখে চিৎকার না দিয়ে বা আতংকিত না হয়ে দূর থেকে লক্ষ করুন। কি এটা কি জীবন বিনাশী কোন প্রানী মনে হয় ? কারো কাছে কি কোন দিন শুনেছেন যে মাকড়শা মানুষকে কামড়ে দেয় ফলে প্রায়ই মৃত্যুর কবলে পড়ে। হ্যাঁ কিছু বিষাক্ত মাকড়শা যে আছে সেটা অস্বীকার করছি না তবে এতটা বিষাক্ত না যতটা আপনি ভাবছেন। আর এখন পর্যন্ত এদেশে এই রকম বিষাক্ত মাকড়শার সন্ধান পাওয়া যায় নাই। তাহলে কিসের ভয় আপনার ?
(৩) মানুষকে প্রকৃতির সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে পাঠানো হয়েছে । ৩০০-৪০০ কেজির একটা বাঘ কিংবা সিংহ যেখানে মানুষকে ভয় পায় আর আপনি মাত্র ১৫-২৫ গ্রামের একটা মাকড়শাকে ভয় পাচ্ছেন বাহ দারুণ তো !! মানুষ হিসেবে আপনি যথেষ্ট শক্তিশালী সেটা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। তো ভাই আসল কথা হচ্ছে আপনাকেই এই ভয় দূর করতে হবে। এটা শুধু একটা মনের রোগ আর কিছুই না। দূর থেকে ফেস করা শুরু করেন। একদিন দুই দিন তিন দিন ঠিকই একদিন দেখবেন আপনার ভয় উধাও হয়ে গেছে। অনেকেই পেরেছেন এইভাবে নিজের ভয় দূর করতে । আপনিও পারবেন এই বিশ্বাসটা মনে সৃষ্টি করে দিন।