মহামায়া-র কোল থেকে
১২ই সেপ্টেম্বর ২০১৪ সাল; খৈইয়াছড়ার চূড়া থেকে নেমে যখন ভাবছি চট্টগ্রাম শহরে দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে ক্লান্তি দূর করব। বিধিবাম প্রকৃতি চাচ্ছে না আজকে রেস্ট দিবে আমাদের। পাহাড়ের কোল থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা চায়ের দোকানে যখন চা খাচ্ছি শর্টওয়ার পড়া এক ভদ্রলোককে দেখলাম দাঁড়িয়ে আছে সাথে তার ১০ জনের বন্ধুবাহিনী । এটা সেটা বলতে বলতে এক সময় আমরা জিজ্ঞেস করলাম এখন কোথায় যাচ্ছেন আমরা তো শহরে ফিরে যাচ্ছি হয়ত শহরের কোন স্থান কিংবা বিকালে পতেঙ্গা সমদ্র সৈকতে সময় কাটিয়ে দিব। উনি বললেন উনারা কাছাকাছি এক স্থান মহামায়া লেকে যাচ্ছেন, মালেশিয়া থাকা কালীন ফেসবুকে দেখে এসছেন উনার কাছে নাকি থাইল্যান্ডের চেয়েও সুন্দর লেগেছে। ঝড় বৃষ্টি যাই হোক উনারা নাকি ঐখানেই যাচ্ছেন। আমরাও ভাবলাম চিটাগাং শহরে আসা হবেই তাই ঘুরে আসি না কেন এই জায়গা থেকে। স্থানীয়দের থেকে খুজ নিয়ে হাটা ধরলাম খৈইয়াছড়া রেইলগেইট এর দিকে। খাওয়াদাওয়া না করেই রওনা দিলাম মহামায়া লেকের উদ্দেশ্যে। সিএনজি ভাড়া নিবে ১৫০ টাকার মত রিজার্ভ। মেইন রোড থেকে নামার পড়ে মহামায়া ইকোপার্কে যাবার পথটা আপনার হাড়গোড় নাড়িয়ে দিবে। ইট বিছানো ভাঙ্গা রাস্তা। অবশেষে ধরে নিলাম মহামায়ার গেটে এসে সিএনজি থেকে নেমে পড়েছেন। ক্লান্তিতে সিএনজিতে ঘুমিয়ে পড়লে এবার আড়মোড়া ভেঙ্গে নিন। আমি সামনের দিকে বসে ছিলাম , গত রাতের নাম ঘুমিয়ে থাকা আর খৈইয়াছড়া পাহাড়ে উঠার ক্লান্তিতে সামনে বসেও ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঝাকিতে ঘুম ভাঙ্গে।
২০০৬-০৭ অর্থবছরে শুরু হয়ে ২০০৯-১০ অর্থবছর পর্যন্ত এই কৃত্রিম ইকোপার্ক তথা লেক প্রকল্প কাজ চলে।
দশ টাকা দিয়ে টিকেট কেটে নিন। গেইট পেড়িয়ে রাস্তা দেখেই আশা করি বুঝতে পারবেন আপনি ভুলে কতটা সুন্দর জায়গায় চলে এসেছেন। সম্ভবত কোন একটা বই এর প্রচ্ছদে এই রকম ঢালু রাস্তার ছবি দেখেছিলাম।
ক্লান্ত পায়ে হেটে উপরে উঠে যান। ডানে বামে তাকিয়ে দেখুন প্রকৃতির সৌন্দর্য্য। সামনের দিকে পানি, পানি পেরিয়ে দূরে দৃষ্টি দিলেই দেখা যাবে পাহাড়ের চূড়াগুলো। ডানে বায়েও পাহাড়। আমাদের দেশের এই সুন্দর স্থানগুলো অবলোকন না করেই আমরা বাইরে যাই সৌন্দর্যের সন্ধানে !!!!!!
রাস্তা থেকে নেমে পড়ুন জলের কাছাকাছি, দেখুন ট্রলার সহ ছোট ছোট ইঞ্জিনের নৌকা রয়েছে। ট্রলারের ভাড়া সাধারন ১৫০০ টাকা নিবে আর ছোট ইঞ্জিনের নৌকাগুলো ৮০০ এর মত নিবে । ট্রলারে ২০ জনের মত উঠা যাবের আর নৌকাতে ৮ জনের মত। কথা দিচ্ছি এতগুলো টাকা গচ্ছা দিচ্ছেন না যখন ২ ঘন্টার মত ঘুরে এসে নামবেন তখন মনে হবে না আসলেই টাকা হালাল হয়েছে। ও অবশ্যই ভাড়া নেবার সময় বলে নিবেন যে পুরু লেক ঘুরাতে হবে।
চলুন ঘুরে আসি এইবার
পথে আপনাদের নিঃসঙ্গতা দূর করতে মাঝে মাঝে দুই একটা পানকৌড়ি ডানা জাপটে আপনাদের আমন্ত্রন জানাবে। পাহাড়ের চূড়া উপর দিয়ে আকাশের দিকে তাকান দেখুন কত সুন্দর লাগছে। সম্ভবত ৩০-৩৫ মিনিটে পৌঁছে যাবেন উত্তর সুরঙ্গ পথের ধারে । আমাদের ট্রলার এখানে থেকে ঘুরে আসে এর পরে আর যাবার মত যায়গা নেই আর সামনের দিকে অল্প যাওয়া যাবে কিন্ত ট্রলার ঘুরানো যাবে না। ঘুরে আবার অনেকখানি পথ পারি দিয়ে গিয়েছি আমরা ছোট একটা ঝর্ণার এর কাছে। ছোট ঝর্ণা নেমে দেখি পানি ময়লা কি কারনে ময়লা সেটা জানা নেই। আর ঝর্নার পথটা অতিরক্ত রকমের পিচ্ছিল।
ফিরে এসে ক্ষিদার তাড়নায় প্রবেশ পথের পাশে একটা ছোট টং এর মত খাবারের দোকানেই আমাদের মত লাঞ্চটা সেরে নেওয়া যায়। সারা দিনের অভুক্ত পেটে মনে হচ্ছিল অমৃত পড়ছে। দোকানের সব খাবার আমরা খেয়ে ফেলি। 😛
সর্বশেষ একটা কথা না বললেই নয় আমি কাপ্তাই লেকে যাই নি কিন্ত ফয়েজ লেকে যাবার সৌভাগ্য হয়েছিল। মহামায়াতে যাবার পর ফয়েজ লেকের সৌন্দর্য্য এর কাছ নস্যি মনে হয়েছে।