ট্রেনের টিকেট হারিয়ে গেলে করনীয় !
রফিক সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে চাকরীর জন্যে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে । ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছোট বোনসহ থাকে। সামনে ঈদ-উল-আযহা । বাড়ি যেতে হবে একটু তাড়াতাড়ি করেই কারন ঈদে প্রচন্ড পরিবহন সংকট থাকে। এর উপর সাথে মেয়ে থাকলে তো সমস্যা প্রকট। কোন রকমে যাওয়ার চিন্তা একদম বাদ দিতে হয়।
প্রতি বছরই যেতে সমস্যা হয় । এবার ভেবেছিল একটু আগেই চলে যাবে দুই ভাই-বোন। কিন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক কারনে কিছু দিন ক্লাস বন্ধ থাকায় পরিক্ষা পিছিয়ে পড়েছিল । বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ঈদের আগেই পরিক্ষাটি সেরে ফেলতে চাচ্ছে। পরীক্ষা শেষ ঈদের ৪ দিন আগে। ঈদে যে পরিমান জ্যাম থাকে রাস্তায় তাই রফিক ঠিক করল এবার ঈদে ট্রেনে বাড়ি যাবে। কিন্ত ঈদে ট্রেনের টিকেট পাওয়া তো সোনার হরিণ হাতে পাওয়া। এবার ঈদের ১০ দিন আগে অগ্রীম টিকেট দেওয়া শুরু হবে।
যে দিন সকাল ৮ টা থেকে টিকেট দেওয়া শুরু হবে এর আগের দিন বিকাল ৫ টায় রফিক ষ্টেশনে আসে টিকেটের লাইন দিতে। এসে দেখে তার আগেও ১০-১৫ জন মানুষ লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রফিক সারা রাত জেগে থাকার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে । ব্যাগে বিসিএস প্রিলিমিনারি ডাইজেস্ট আর সাধ্যের মধ্যে দুইটা বিস্কিটের প্যাকেট আর দুই লিটার পানির একটি বোতল।
রাত ৩ টা, ইতিমধ্যে প্রত্যেকটা লাইন ষ্টেশনের প্লাটফর্ম ছাড়িয়ে রাস্তায় চলে গিয়েছে । প্রত্যেকটা লাইনে ২০০-৩০০ মানুষ ভোর ৫ টায় দিকে বসে বসেই একটু ঝিমিয়ে পড়ছিল । হইচই শুনে ধরফর করে চোখ খুলে । দেখে এক ব্যক্তি লোকজন ঝিমিয়ে পড়ার সুবাধে লাইনের মাঝখানে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। লোকজন চিল্লা চিল্লি শুরু করে। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে সকাল ৮ টা বেজে যায়।
রফিকের সিরিয়াল আসল । দুইটা টিকেটের দাম ১৩৫০ টাকা (কাল্পনিক) । তো রফিক ১৩৫০ টাকা দিয়ে দুইটা টিকেটের দাবি জানাল। রেলওয়ে স্টাফ আরো ২০০ টাকা অতিরিক্ত দাবি করল। রফিক বলল কিসের অতিরিক্ত টাকা । ভদ্রলোক বললেন চা-বিস্কিটের টাকা। প্রথমে রফিক দিতে অপারগতা প্রকাশ করলেও পরে দিতে বাধ্য হল।
টিকেট পেয়ে মহা খুশিতে রফিক সাইন্সল্যাব বাসায় প্রবেশ করে পকেট থেকে টিকেট বের করে বোনকে দেখাতে গেল। সবগুলো পকেট খুঁজেও টিকেট পেল না ! বুঝল কমলাপুর বাসের ভাড়া দেওয়ার সময় হয়ত পড়ে গেছে। নাস্তা করা ছাড়াই রফিক আবার বাসা থেকে বের হয়ে স্টেশনে চলে আসে। তথ্যকেন্দ্রে কথা বলে এর কোন সোরাহা পায় না, উনাদের কিছু করার নাই, টিকেট সাবধানে রাখতে পারে না ? আরো কত কথা শুনালো। রফিকের মাথায় হাত ছোট বোনকে নিয়ে কিভাবে বাড়ি যাবে, বাসেও যাওয়া সম্ভব না এখন আর ।
তখন মনে পড়লে আরে আমার তো টিকেটের কোচ নাম্বার আর সিট নাম্বার মনে আছে , কাউন্টারে গিয়ে আবার বললেই তো প্রিন্ট করে দিবে। লোকজনের ভীড়ে সামনে যেতেই পাড়ল না অনেকক্ষণ, সামনে যেতে চাইলেই লোকজন তেড়ে আসে। অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার পরে কয়েকজনকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে তার টিকেট হারিয়ে গিয়েছে উনাদের কয়েকজন তাকে কাউন্টারে কথা বলার সুযোগ দেন। রফিক কাউন্টারে কথা বলার পরে উনারা জানায় উনাদের কিছু করার নেই, সিস্টেমে একবারই টিকেট প্রিন্টের ব্যবস্থা আছে ! রফিক অনেক কাতুতি মিনতি করলেও তিনি অপারগতা প্রকাশ করে। রফিকের করুন অবস্থা দেখে ভদ্রলোক বুদ্ধি দেন আপনি বরং ষ্টেশন মাস্টারের সাথে কথা বলুন।
রফিক ষ্টেশন মাস্টারের রুমে প্রবেশ করে দেখতে পায় মাস্টার সাহেব কয়েকজন লোকের সাথে চা খাচ্ছেন আর খুস গল্পে ব্যস্ত। রফিক ৫ মিনিট পরে উনার দৃষ্টি আকর্ষনে সক্ষম হয়। ভদ্রলোক খুব বিরক্তি সহকারে বলেন কি হইছে তোমাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি। উল্লেখ্য রফিক উনার কাছ থেকে অবশ্য ম্যানার প্রত্যাশা করেও নি। রফিক বলল তার টিকেট হারিয়ে ফেলেছে , ষ্টেশন মাস্টার সাহেব তখন বললেন তুমি টিকেট হারিয়ে ফেলেছ তা আমি কি করতে পারি ? :O
রফিক বলল আমাকে কি কোনভাবে টিকেটের অনুলিপি দেওয়া যাবে ? ষ্টেশন মাস্টার বলল না যাবে না। রফিকের করুন চেহারার দিকে তাকিয়ে কি মনে করে ষ্টেশন মাস্টার বলল আচ্ছা যদি টিকেটের নাম্বার আর কোচ নাম্বার মনে থাকে তাহলে একমাত্র উপায় হল থানায় জিডি করে ঐ জিডি পেপার সহ ভ্রমণ করা। রফিক ধন্যবাদ দিয়ে বের হয়ে থানার দিকে চলে আসে।
রেলওয়ে থানায় আসল টিকেটের জন্যে জিডি করতে তো একজন পুলিশ সদস্য বসে ছিল । রফিক যাওয়াতে কাটখোট্টা ভাষায় বলল
– এইখানে কি চাই কেন আইছো ?
– টিকেট হারিয়ে গেছে ষ্টেশন মাস্টার বললেন থানায় এসে জিডি করতে তাই থানায় এসেছি।
– দুইটা টিকেটের জন্যেও মানুষ জিডি করতে আসে ?
– জ্বি আসে আমার দরকার অতিরিক্ত টাকা নেই যে টিকেট করব।
-আচ্ছা তুমি কি মাইকে ঘোষনা দিয়েছে যে টিকেট হারায়া গেছে ?
– নাহ দেই নি।
– আমি তো শুনি নাই , তাহলে যাও জিডি করা যাবে না।
-কেন যাবে না ? জিডি করা তো সমস্যা না !
– আরে এত কথা কও কে হে ? বেশি বুঝ না ?
-নাহ। আমার ছোট বোন নিয়ে যেতে হবে তো তাই !
-তা আমি করতে পারব না যাও । যাইতে কইছি যাও।
-আমার খুব উপকার হয় জিডি করে দিলে।
-আরে এত কথা কও কেন । যাও এখান থেকে। রেলের এই পাশে দশ হাত ঐ পাশে দশ হাত ছাড়া আমাদের কিচ্ছু করার নাই । যাও এখন।
রফিক প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে চুপ চাপ রেলওয়ে থানা বেড়িয়ে এসে মতিঝিল থানায় জিডি করে বাসায় চলে আসে । সেই জিডি দেখিয়ে বাড়ি গমন করে।
সার কথাঃ টিকেট হারিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট থানায় সিট নাম্বার উল্লেখপূর্বক জিডি করে ঐ জিডি পেপার টিকেট কালেক্টরকে দেখিয়ে ভ্রমন করতে হবে দেখাতে হবে। টিকেটের অনুলিপি দেওয়া হয় না। ভুলেও রেলওয়ে থানায় যাবেন না জিডি করতে । ইজ্জতও হারাতে পারেন। -_-
( সত্য ঘটনা অবলম্বনে )