খৈইয়াছড়া-র চূড়া থেকে বলছি
১০ সেপ্টেম্বর,২০১৪ঃ রাত ১০ টা’র দিকে রিয়াদ ভাই এর সাথে রাস্তায় দেখা। কথা প্রসঙ্গে বলেন
– এই তো শুক্রবার মিরসরাই যাচ্ছি খৈইয়াছড়াতে যাবা নাকি
– কে কে যাচ্ছে।
– এই আমার কিছু ফ্রেন্ড আর কলিগ!
একটু ভেবে বললাম চলেন ঘুরে আসি।
বাসায় এসে আব্বার থেকে থেকে অনুমতি আর সাথে টাকার যোগাড় করি।
১১ তারিখ বৃহস্পতিবার রাত ১২.৩০ মিনিটে ঈগলের টিকেট কাটা হয়। নির্ধারিত সময়ে ৩০ মিনিট আগেই গিয়ে পৌঁছায় সায়দাবাদ বাস স্ট্যান্ডে। ভাবছিলাম রিয়াদ এর সফর সঙ্গিরা সম্ভবত একটু গম্ভীরই হবে। কিন্ত বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে এই ধারনা পুরুপুরি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। সবাই হই হল্লো করে আমাকে বরন করে নেয়।
সবাই খুবই মিশুক মন নিয়ে ট্যুরে গমনের উদ্দেশ্যে এসেছে। উহ দেখি এক ৬০ উর্ধ্ব ভদ্রলোক কাউন্টারে বসে আছেন। বাসের উঠার আগে জানলাম ভদ্রলোক আমাদের সফর সঙ্গি। কথা বার্তাতে মনে হল উনি আমাদের মত ২৫-৩০ বছরে ফিরে এসেছেন।
নির্ধারিত সময়ে বাস ছেড়ে শনি আখড়াতে গেলে আমরা চিরাচরিত জ্যামে পড়ি মাঝরাতে। শুনতে পেলাম এই জ্যাম নাকি সেই কাচপুর পর্যন্ত বিস্তৃত। আমাদের বাসের ড্রাইভার বাস ঘুরিয়ে আবার ডেমরা রোডে প্রবেশ করে। উমা একটু গিয়েই আবার জ্যামে পড়লাম। আমরা ভাবতেছিলাম সকালের আগে এই জ্যাম ছাড়বে কিনা। ২ টার পরে আমরা এই জ্যাম থেকে মুক্তি পাই। হইহুল্লো করে কাটিয়ে দেই রাতের অনেকটাংশ।
সকাল ৭.২০ মিনিটে মিরসরাই বাজারে বাস থেকে নেমে ঝরনার উদ্দেশ্যে সিএনজি নেই। সিএনজি ভাড়া ১৫০ টাকার মত নিবে। ইচ্ছে করলে আমরা একটু আগেই নামতে পারতাম কিন্ত ঐ জায়গাগুলোতে সিএনজি সচরাচর পাওয়া যায় না। যাই হোক ৩০ মিনিট পরে আমরা পূর্ব খৈইয়াছড়া রেল গেইট নেমে পড়তে হয়।
হালকা নাস্তা সেড়ে একটা স্থানীয় ছোট ছেলেকে ২০০ টাকায় গাইড হিসেব গ্রহন করে যাত্রা আরম্ভ করি । ইচ্ছে করলে আপনারা রেলগেইট পেড়িয়ে সোজা রাস্তা ধরে ১০ মিনিট হাটলে ঝর্না থেকে নেমে আসা ছোট খাল ধরেও অগ্রসর হতে পারেন । তবে শুনলাম সে ক্ষেত্রে অনেকগুলো ঝামেলায় পড়তে হবে। যেমন; অনেক জায়গায় কাঁদা মাড়িয়ে যেতে হবে, কোথাও হঠাত করে জলের গভীরতা অনেক বেশি আবার অনেক পথ ঘুরে যেতে হবে ইত্যাদি।
২৫-৩০ মিনিট হাটার পরে মসজিদ পেড়িয়ে একটু সামনে সর্বশেষ গনবসতি তথা একটা দোকান পাবেন। প্রয়োজনে খাবার সেরে কিছু হালকা খাবার নিয়ে নিতে পারেন।
মোটামোটি এক ঘন্টা জল-সমতল, ছোট ছোট পাহাড় ছুড়া ঝর্নার জলধারা পেরিয়ে ঝর্নার নিচে পৌঁছে যাবেন।
কষ্ট করে ১ ঘন্টা হাঁটার ক্লান্তি নিমেষেই ভুলে যাবেন কথা দিচ্ছি। উৎসুক হয়ে প্রথমেই কিন্ত ভিজে পড়বেন না। কারন আসল থ্রিল তো এইবার মাত্র শুরু। দেখুন বাম পাসে উপরে উঠার ট্রেইল আছে । সাবধান প্রচুর পিচ্ছিল ট্রেইল। আর কেউ একজন উপরে ভিজা পায়ে উঠলে তো আরো পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। সাবধানে কোন অবলম্বন ধরে উপরে উঠুন।
অবশ্য দড়ি নিয়ে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ। কেউ একজন উপরে উঠে দড়ি বেধে দিলে সবাই সহজেই উঠতে পারবে। কম্রান্বয়ে আরো দুইটা টিলা পার হবার পরে নিচ থেকে দেখতে পাওয়া ঝর্নার উপরে পৌছাবেন। ভাববেন না এটাই শেষ। এর পরে আরো সমানে এগিয়ে যান । খুবই সাবধান কারন শিলাগুলো প্রচুর পিচ্ছিল।
পানি ধরে এগিয়ে যাওয়াটা বোকামি। কারন হঠাৎ করেই দেখবেন পানিতে খাঁদে পড়ে যাবেন। এর পরের ঝর্নার পাদদেশে পৌঁছালে আপনার মনের অনুভূতি আকাশ ছোয়া হয়ে যাবে। ওই ঝর্নার পাদদেশে ছবি নেওয়া সময় সাবধান। কারন হড়কে পড়লে খবরই আছে !
ট্রেইল ধরে আরো উপরে উঠে যেতে পারেন। অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কোন কারনে পড়ে গেলে কিন্ত রক্ষা নাই সবই আল্লাহর হাতে তখন।
ফিরে আসার সময়ও সাবধানতা অবলম্বন করুন।
সকাল সকাল পৌছাতে পারলে খুবই ভাল, তা না হলে দেখা যায় প্রচুর লোকজনের ভীড়।
আমরা যখন নেমে আসি তখন ১০.৫০ এর মত বাজে। নেমে দেখি লোকজের ঢল নেমেছে। ফিরে আসার সময়ও পথে প্রচুর লোকজনকে ঝর্না মূখি হতে দেখি।
ভাল কথা যাদের হার্ট দুর্বল তারা উপরের উঠার চেষ্টা না করাই উত্তম। নির্ভেজাল উপদেশ হল ঝর্নার দেখতে যাওয়ার কিছু দিন আগে থেকে হাত-পা নাড়াচড়া করার ব্যায়াম করলে ভাল হয়। না হলে ফিরে আসার সময় টের পাওয়া যায় কি সুন্দর অনুভূতি।
প্রয়োজনীয় টিপসঃ
১। সম্ভব হলে খুব সকাল সকাল পৌঁছানোর চেষ্টা করুন
২। চামড়ার স্যান্ডেল বা কেডস টাইপের জুতা পরিহার করে ১০০ টাকায় প্যাগাসাস স্যান্ডেল ক্রয় করুন
৩। যেখানে সেখানে চকলেটের খোসা, পানির বোতল বা চিপসের প্যাকেট ফেলবেন না
৪। চাইলে গাইড নিতে পারেন সে ক্ষেত্রে আমি বলব লোকজন পাবেন সামনে হাটছে তাদের সাথে হাটতে পারেন। আর গাইড নেওয়ার ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা অবলম্বন করুন, দামাদামি করে নেওয়াটাই ভাল । বেশ কয়েকগুন দাম চায় অনেকে।
৫। দুপুরের আগে চলে আসলে মহামায়া লেক দেখতে আসতে পারেন।
দরকারী জিনিসপত্রঃ
১। ছেলেদের জন্যে বিচ শর্টস/ মেয়েদের মানানসই কাপড়
২। গামছা , টি শার্ট
৩। পানির বোতল
৪। ক্যামেরা +এক্সটা ব্যাটারি
৫। পলিথিন
৬। দড়ি
৭। ফাস্ট এইড কিট
৮। পেইন কিলার , জীবানু নাশক , প্রয়োজনীয় ওষধ
১০। অতিরিক্ত জামা -কাপড়।