0
জাতিগতভাবে উইঘুর মুসলিম নিধন করছে চীন সরকার
১৯৪৯ এ জিনজিয়াং যখন চীনের দখলে এলো, তখন সেখানে উইঘুররা ছিলো শতকরা ৭৬ ভাগ, আর বর্তমানে তা মাত্র ৪২ ভাগ! ইতিমধ্যে ১৬০০০ হাজার মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে যার জিনজিয়াং এর দুই-তৃতীয়াংশ !
উইঘুররা বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৩৩ সালে তারা ইসলামিক রিপাবলিক অফ ইস্ট তুর্কিস্থান নামে একটি রাষ্ট্র গঠন করে কিন্ত এক বছর যেতে না যেতেই চাইনিস ফোর্স এটি দখল করে নেয়। ১৯৪৪ সালে সুভিয়েত ইউনিয়ন এখানে ঘাটি গাড়ে। তবে এই অঞ্চলটি ১৯৪৯ সালে চীনের কমিউনিস্ট সরকার সুভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়।
উইঘুররা মূলত চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে বসবাসরত একটি মুসলিম সম্প্রদায় । উইঘুর জাতির ইতিহাস প্রায় চার হাজার বছর আগের। মূলত, এরা স্বাধীন পূর্ব তুর্কিস্তানের অধিবাসী। চীন কর্তৃক স্বীকৃত ৫৫টি সংখ্যালঘু নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর একটি উইঘুর । চীন ছাড়াও কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, রাশিয়া, তুরস্ক ও সৌদি আরবেও উইঘুরগন বসবাস করেন।
২০০৯ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, এসব দেশের মধ্যে চীনের জিনজিয়াংয়ে ১ কোটি ২০ হাজারের মতো উইঘুর লোক বসবাস করে। কাজাখস্তানে ২ লাখ ২৩ হাজার, উজবেকিস্তানে ৫৫ হাজার, কিরগিজস্তানে ৪৯ হাজার, তুরস্কে ১৯ হাজার, রাশিয়ায় ৪ হাজার, ইউক্রেনে ১ হাজারের মতো উইঘুর লোক বাস করে।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকেও প্রাচীন এ সম্প্রদায়ের লোকদের উইঘুর না বলে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ডাকা হতো। মূলত, ১৯২১ সালে উজবেকিস্তানে এক সম্মেলনের পর উইঘুররা তাদের পুরোনো পরিচয় ফিরে যায়। ভাষাবিদ ও ইতিহাসবেত্তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন যে ‘উইঘুর’ শব্দটি ‘উয়্যুঘুর’ শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ সংঘবদ্ধ।
চীন কেন জিনজিয়াংকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে ?
জিনজিয়াং এনার্জি রিসোর্সে সমৃদ্ধ যা চীনের ইকোনমিক গ্রোথের জন্য খুবই জরুরি। চীনের মোট মজুদের প্রায় ৪০ শতাংশ কয়লা আর ২০ শতাংশ গ্যাস ও তেল এ অঞ্চল দখল করে আছে। পৃথিবীর প্রায় এক পঞ্চমাংশ তুলা এখানে উৎপাদন হয় !
২০১৩ সালের পর জিনজিয়াং চীনের কাছে আরো গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠে। রেশমপথ (সিল্ক রোড) নামে প্রকল্প এর গুরত্ব বাড়িয়ে দিয়ে। । সিল্ক রোডকে পরে নাম দেওয়া হয় ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড (ওবর)। কিন্তু ‘ওয়ান’ বা ‘একক’ কথাটার মধ্যে একাধিপত্যের লক্ষণ থাকায় এর সর্বশেষ নাম দেওয়া হয়েছে
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, সংক্ষেপে বিআরআই। এটি একটি ট্রিলিয়ন ডলার ইনভেস্টমেন্ট যা ফাইবার অপটিক, গ্যাসলাইন, ট্রেনলাইন, সড়ক পথ ও সমুদ্রপথের সমন্বয়ে চীনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ইনফ্লুয়েন্স বাড়ানোর একটা বিশাল কর্মপরিকল্পনা !
যখন ম্যাপে এই পরিকল্পনা চিত্রায়ন করা হয় দেখা যায় অনেকগুলো পথ জিনজিয়াং এর মধ্য দিয়ে প্রবেশ করেছে যা পুরু প্রজেক্টের একটি গুরুত্বপূর্ণ করিডোর হিসেবে কাজ করছে। এখন চায়নাকে নিশ্চিত করতে হবে যে যেন এই প্রদেশে তাদের কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকে।
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ছবিঃ ভক্স
উইঘুর নিয়ন্ত্রনে চাইনিস সরকার কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছে ?
তিব্বতের মত জিনজিয়াং প্রদেশও চলে কঠোর নজরদারী। প্রদেশটি হাইটেকনোলজী পুলিশ প্রদেশে পরিনত হয়েছে। ‘ইন্টিগ্রেটেড জয়েন্ট অপারেশনস প্লাটফর্ম’ বা আইজেওপি নামে পরিচিত এক পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে চীনের জিনজিয়াং এ বসবাসরত মুসলমানদের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের কথা আগেই জানিয়েছিল এইচআরডাব্লিউ৷ নজরদারি জন্যে ফেইস ও ভয়েস রিকগনিশন, আইরিস স্ক্যানিং, ডিএনএ নমুনা ও থ্রিডি শনাক্তকরণ পদ্ধতিতে চালানো হয়। স্বজাতির মধ্যে গুপ্তচরবৃত্তির কাজটি করে থাকে উইঘুরদের কেউ কেউই। কেউ ধূমপান বা মদ্যপান নতুন করে ছাড়লো কি না বা চীনা সংবাদ দেখে কি না- এসব পর্যন্ত নজরদারি করা হয়!
এইচআরডাব্লিউ জানায় বর্তমানে আইজেওপি ব্যবস্থার সাথে সাথে আরো একটি নতুন অ্যাপের ব্যবহার শুরু করেছে চীন কর্তৃপক্ষ ৷ এ অ্যাপের মাধ্যমে মানুষের ৩৬ ধরনের আচরণের তথ্য সংগ্রহ করা হয়৷ যেমন, প্রতিবেশীর সঙ্গে বেশি না মেশা, বাড়িতে ঢোকার সময় পেছনের দরজা ব্যবহার করা, স্মার্টফোন ব্যবহার না করা, ‘উৎসাহী হয়ে’ মসজিদে দান করা, বিদ্যুতের ‘অস্বাভাবিক’ ব্যবহার ইত্যাদি ইত্যাদি।
অপরিচিত কেউ মোবাইল নাম্বার নিলে বা বিদেশ গিয়ে গত ৩০ দিনে দেশে ফেরি নি এমন লোকদের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সতর্ক বার্তার প্রদান করে। এছাড়াও হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, ভিপিএন-এর মত চীনের বাইরে নির্মিত ৫১টি ইন্টারনেট টুলস ব্যবহারের অন্যে মুসলিমদের আটক করা হচ্ছে।
এইচআরডাব্লিউ চীনের পুলিশের ব্যবহার করা অ্যাপটির একটি কপি সংগ্রহ করে ‘কিউর৫৩’ নামে জার্মানির একটি সাইবার সিকিউরিটি কোম্পানিকে তার নকশা ও তথ্য পরীক্ষা করতে দিয়েছিল৷ তারা রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং এর মাধ্যমে এসব তথ্য জনসম্মুখে নিয়ে আসে।
জিনজিয়াং প্রদেশে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরধারী করা হয়। স্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ এর মধ্যে দুটি বৃহত্তম উইঘুর প্রদেশে বৃদ্ধির হার ৮৮% হ্রাস পেয়েছে এবং ২০১৯ সালে আরও হ্রাস পেয়েছে ! এমনকি নারীদের উপর বাধ্যতামূলকভাবে স্থায়ী বন্ধাকরণ প্রয়োগ করা হচ্ছে। জানা গেছে, শিনজিয়াং প্রদেশে আগে প্রতি এক লক্ষের মধ্যে ৫০ জন মহিলা বন্ধ্যাত্বের শিকার হচ্ছিলেন। তবে বর্তমানে সেই সংখ্যা গিয়ে পৌঁছেছে ২৫০ জনে।
উইঘুরদের জাতিগত দমনে চীন সরকারের অন্য যে কৌশলটির কথা বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে এসেছে তা হল, উইঘুর মুসলিম নারীদের সঙ্গে অমুসলিম চীনাদের বিয়ে। তবে বিষয়টি আলোচনায় আসার পেছনে কারণ হল, এসব বিয়ে সম্পাদিত হচ্ছে জোরপূর্বকভাবে।
১৯৫০ সালের দিক থেকেই চীন বিদ্রোহীখ্যাত উইঘুরদের লঘুকরন কর্মসূচি শুরু করে। এই উদ্দেশ্যে চীনের অন্য প্রান্ত থেকে হান চাইনিজদের উইঘুর অধ্যষিত এলাকাতে স্থানান্তর শুরু করে । এবং এটি যথেষ্ট ফলপ্রসু বলে প্রমাণ হয়।
হান চাইনিজ স্থানান্তর, ছবিঃ ভক্স
১৯৪৫ সালে যেখানে জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর ছিল ৮০% এবং হান ছিল মাত্র ৬ শতাংশে সেখানে ২০০৮ সালে উইঘুর জনসংখ্যা নেমে আসে মাত্র ৪৬ শতাংশে আর হান চাইনিজ তখন প্রায় ৩৯ শতাংশে উন্নিত হয় !
উইঘুর ও হানদের তুলনামূলক জনসংখ্যার ডেমোগ্রাফ, ছবিঃ ভক্স
ইসলামী উগ্রবাদ দমনের নামে চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় দশ লাখ উইগুর সম্প্রদায়ের মানুষকে বিভিন্ন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ চীনা কর্তৃপক্ষ বরাবরই একে ‘কারিগরি শিক্ষা প্রদান কেন্দ্র’ বলে দাবি করে আসছে৷ যেসব শিবিরে মুসলমানদের রাখা হচ্ছে, সেটাকে বলা হচ্ছে ‘ইনডকট্রিনেশন ক্যাম্প’ বা দীক্ষাদান শিবির, যদিও এটি মুসলমানদের কাছে ‘ব্রেইন ওয়াশ’ কেন্দ্র হিসেবেই বেশি পরিচিত।
তাদের নিজেদের ধর্মীয় চিন্তাভাবনা পুরোপুরি দূর করা এবং তাদের নতুন রূপে পরিচয় করানোই বন্দিশিবিরের উদ্দেশ্য। এই ক্যাম্পে শুয়োরের মাংস খেতে এবং মদ পান করতে বাধ্য করা হচ্ছে। তবে খাওয়ার আগে বাধ্যতামূলকভাবে কম্যুনিস্ট পার্টিকে ধন্যবাদ জানাতে হয়, পাশপাশি মাতৃভূমি এবং চীনা রাষ্ট্রপতিকেও ধন্যবাদ জানাতে হয়। বন্দিশিবিরে যারা থাকেন, তাদের নিজেদের চিন্তাভাবনা অর্থাৎ ধর্মীয় চিন্তা পরিবর্তন করতে হয়। নিজেদের সম্প্রদায়কে ত্যাগের কথা ভাবতে বাধ্য করা হয়।
উইঘুরদের পরবর্তী প্রজন্মকে তাদের সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও প্রথা থেকে দূরে রেখে সমাজবাদী চীনের অনুগত হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাদেরকে পরিবার থেকে আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। একবার ভাবুন তো আপনার পরিবারের ৭/৮ বছরের বাচ্চাদের আপনাদের থেকে জোর করে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে !
২০১৭ সালে জিনজিয়ানে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ভর্তি হওয়া শিশুদের সংখ্যা পাঁচ লাখ ছাড়িয়েছে। এদেরমধ্যে উইঘুর বা অন্য মুসলিম শিশুদের ভর্তির হার বেড়েছে ৯০ শতাংশ। এই প্রদেশে ভর্তির হার বৃদ্ধি জাতীয় পর্যায়ে বৃদ্ধির হারকে ছাড়িয়ে গেছে। জিনজিয়ানের দক্ষিণাঞ্চলে যেখানে উইঘুর মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেখানে কর্তৃপক্ষ কেবল কিন্ডারগার্টেন স্কুল তৈরিতে ১২০ বিলিয়ন ডলার খরচ করছে। আর অর্থের বেশিরভাগই ব্যয় হচ্ছে ছাত্রবাস নির্মাণে, যেখানে শিশুদেরকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হবে। চীন পরবর্তি কয়েক প্রজন্ম পরে, মডিফায়েড ভার্শন উইঘুর প্রতিস্থাপনের দ্বারপ্রান্তে।
সেলগুলো থেকে প্রতিরাতে নারীদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় , তার পর মুখোশ পরা
এক বা একাধিক চীনা পুরুষ তাদের ধর্ষণ করে ! বন্দীদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী ও কমবয়স্ক মেয়েদের পাবার জন চীনা পুরুষরা টাকাপয়সা পর্যন্ত দেয়। কিছু মেয়ে – যাদের সেল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়- তারা আর কখনো ফিরে আসে না।
চীনা নাগরিকদের পাশাপাশি প্রচুর বিদেশি চীনে গিয়ে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেন। এই অমানবিক কাজটি করার জন্যে চীনের সাপ্লাই অনেকাংশে নির্ভর করে উইঘুর সহ কিছু ট্রাইবাল লোকদের অংগ কেটে নেওয়া। চীনে সংখ্যালঘুদের হত্যা করে তাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল। তারা এ ঘটনাকে শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়াবহ নৃশংসতার সঙ্গেও তুলনা করেছে । চাইনিজদের প্রতিবছর এই ব্যবসা থেকে আয়
প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশি টাকায় এটি প্রায় ৮৫০০ কোটি টাকা !
এদিকে অনেক উইঘুর নানা দেশে পালিয়ে যাচ্ছে। তুরস্কে চীনা দূতাবাস সেখানে বসবাসরতদের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে তা আর নবায়ন করছে না । একটি কাগজ দেয়া হয়, যার মাধ্যমে তাঁরা চীনে ফেরার সুযোগ পান। ফিরলেই পাঠানো হবে
ইনডকট্রিনেশন ক্যাম্পে। বিদেশে থাকা আত্মীয়স্বজনের উদ্দেশ্যে চীনে থাকা আত্মীয় দ্বারা বিভ্রান্তিমূলক ভিডিও বার্তা প্রকাশ করা হয়। এমন কি ফোন করা হলে সরকারী নির্দেশে শিখিয়ে দেওয়া বুলি আওরানো হয়। বিদেশে বসবাসরত উইগুরদের শায়েস্তা করতে শিনজিয়াংয়ে থাকা
আত্মীয়স্বজনদের দিয়ে এমন ভিডিও রিলিজের ঘটনা নিয়মিতই প্রকাশ করা হয়। চীনা কর্তৃপক্ষ ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে বিদেশে থাকা উইগুরদের মুখ বন্ধ করতে চেষ্টা করছে।
ডিটেনশন ক্যাম্পে উইঘুর ছবিঃ স্টেটসম্যান
একটি
অস্ট্রেলিয়ান সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ৮০ হাজারেরও বেশি উইঘুরকে সংশোধন ক্যাম্প থেকে সরিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের কারখানায় জোরপূর্বক কাজ করানো হচ্ছে। বিশ্বের ৮৩টি বিখ্যাত ব্র্যান্ডের কারখানায় উইগুরদের জোরপূর্বক কাজ করানোর খবর পাওয়া যায়। এইসব ব্র্যান্ডের পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিশ্বের তাবত তথ্যপ্রযুক্তি, পোশাক ও যানবাহন প্রস্তুতকারী সংস্থা, যেমন অ্যাপল, বিএমডাব্লিউ, নাইকি, হুয়াওয়ে, স্যামসাং, সোনি ও ফক্সভাগেন এর মত প্রতিষ্ঠান। ফক্সভাগেন আর এপলের মত কোম্পানিকে এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে।
করোনার পরিস্থিতিতে পুরু বিশ্ব যেখানে স্থবির হয়ে পড়েছিল সেখানে রিস্ক থাকা স্বত্বেও চীন তাদের প্রোডাকশন লাইন ঠিক রাখতে উইঘুরদের কারখানাতে প্রেরণ করেছে !
মজার ব্যাপার হল, সম্প্রতি ডিটেনশন ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখ পড়ায় গোপনে বন্দিদের দেশের
বিভিন্ন বন্দিশালায় প্রেরণ করা হচ্ছে।
মসজিদ ধ্বংস করা হচ্ছে।
উইঘুর মুসলমানদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের প্রায় ৯০ শতাংশই থেকে যাচ্ছে বিশ্ববাসীর নজরের অগোচরে, কেননা দেশটির প্রচার মাধ্যমগুলোতে কঠোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। কঠোর এই নিয়ন্ত্রণের মধ্যেও যে সকল সংবাদ পাওয়া যায় তা থেকে দেখা যায় ১৮ বছরের নীচে কোনো উইঘুর বালক মসজিদে যেতে পারে না সরকারি বিধি নিষেধের কারণে। সন্তানদের মুসলিম নামকরণেও রয়েছে বিধি নিষেধ। আর ৫০ বছরে কম বয়সী কেউ প্রকাশ্যে নামাজ পড়তে পারে না। নামাজ পড়ার কারণে অনেক চাকুরীজীবী মুসলমানের চাকুরি চলে গেছে। অনেকগুলো মসজিদ ভেঙ্গে ফেলে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র। জিনজিয়াং বিভিন্ন ইসলামি রীতি এবং আচারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রচারণা চালানো হয় বিশেষ করে খাদ্য ছাড়া বিভিন্ন হালাল পণ্য ব্যবহারের প্রবণতার বিরোধিতা করা হয়।
চীন শিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় দশ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দি করে রেখেছে। তাদের ধর্মের অধিকার, সন্তান উৎপাদনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। উইঘুর মুসলিমদের সঙ্গে কার্যত দাসের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। জিনজিয়াং-এর মানুষদের উপর দমন-নিপীড়নের অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে চীন। তারা বলছে, সম্পদে ভরপুর এই এলাকাটিকে অর্থনীতিতে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতেই তাদের এ উদ্যোগ। সমস্যা হলো, এখনো পর্যন্ত ওই অঞ্চলে কোনো সংগঠনকে যেতে দেয়নি চীন।
মুসলিম বিশ্ব প্রতিরোধ-প্রতিবাদ জানিয়েছে ফিলিস্তিনিদের ওপর অত্যাচার, রোহিঙ্গা নিধনের বিষয়ে তবে উইঘুরদের ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচারের ঘটনায়ও তাদের মুখ খুলতে দেখা যায়নি। কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকেও এ ব্যাপারে জোরালো উচ্চবাচ্য করতে আজ পর্যন্ত দেখা যায় নি। চীনের অর্থনীতির রমরমা অবস্থা এবং তাদের কাছ থেকে নানান সুবিধা পেয়ে অধিকাংশ মুসলিম দেশ এসবের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলে না। বুদ্ধিজীবীরাও কথা বলেন না। কারণ, এঁদের অনেকেই মার্ক্সীয় তত্ত্ব, মাও তত্ত্ব ভর করে আছেন। আর মুসলিমদের ব্যাপারে বরাবরই মুসলিম সুশীল সমাজ বা আমরা একরকম অন্ধ। শুধুমাত্র তুরস্ক এবং মালয়েশিয়া চীনের অত্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়েছে।
Like this:
Like Loading...
Related