• Home
  • আলোচনা

আত্মহত্যা নামক দূর্দান্ত জিনিস চলুন হজম করে ফেলি

আত্মহত্যা !

করবেন ভাবছেন  এই তো ! !  আপনার হাতে তো এখন অফুরন্ত তিক্ত সময়  তাই না। মরার আগে একবার অন্তত নিচের নিমপাতা মেশানো লাইনগুলো তথ্যগুলো  পড়ে যান।

আত্মহনন বা আত্মহত্যা কিংবা Suicide শব্দটি এসছে ল্যাটিন suicidium শব্দ থেকে যার  মানে নিজকে নিজে শেষ করে দেওয়া । নিজ আত্মাকে চরম যন্ত্রণা ও কষ্ট দেয়া। নিজই নিজের জীবনের সকল কর্মকাণ্ডের পরিসমাপ্তি ঘটানো। সহজ কথায় মরার আগে নিজেকে খুনি হিসেবে সবার সমানে উপস্থাপন করে যাচ্ছেন।

কঠিন সব কথা তাই না আরো কিছু জানার আগে চলেন একটা মজার জিনিস জেনে আসিঃ

 

অওকিগাহারা,  “সি অফ ট্রি” বা গাছের সাগর নামে জঙ্গলটি জাপানের মাউন্ট ফুজি বনের উত্তর পশ্চিম অঞ্চল জুড়ে ৩৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত।   প্রচুর পরিমাণে গাছপালা আর বন্যপ্রাণীর অনুপস্থিতির   কারণে এই বনটি অনেকটা শান্ত হওয়ায় এটি পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়  একটি স্থান । স্থানটি কিন্ত এ কারনে বিখ্যাত না ।  জাপানের শ্রেষ্ঠ বিক্রিত বই গুলোর মধ্যে Seicho Matsumoto  এর ১৯৬০ সালে লেখা “Tower of wave” উপন্যাসের প্রেমিকযুগল এখান আত্মহননের পরেই এই স্থানটি পৃথিবীর সব মানুষের কাছে আত্মহত্যার জন্যে একটি অনন্য স্থান হিসেবে পরিচিত লাভ করে।    ধরুন এই বনের ভীতর দিয়ে হাটছেন দেখা গেল একটু পর পরেই কঙ্কাল ঝুলছে কেমন লাগবে তখন একবার ভাবুন না। আপনিও কিন্ত সেই কঙ্কালের একজন হবার  জন্যে উদগ্রীব হয়ে আছেন  তাই না । প্রত্যেক বছরই নাকি অনেক মানুষ এখানে আত্মহননের উদ্দেশ্যে আসে। শুনা যায় কেউ কেউ অনেক দূর দেশ  থেকে টাকা খরচ করে আত্মহত্যা করতে আসে।

শোনা যায় ১৯৫০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৫শ’র মতো জাপানি এখানে আত্মহত্যা করেছেন। শুধুমাত্র ২০০২ সালেই ৭৮টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।২০০৩ সালের দিকে যখন আত্মহত্যার হার ১০০ এর বেশি হয়ে যায় এবং তখন থেকে জাপানি সরকার আত্মহত্যার হার প্রকাশ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কি বিশ্বাস হচ্ছে না ? গুগল মামাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন না অথবা ঘুরে আসুন  উইকি থেকে।

 

যে কারনে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়, মানুষ আপনার ক্ষেত্রে কোনটা দায়ীঃ  মনোবিধদের মতে  প্রতিটি আত্মহত্যা-কারীর  রক্তে তিনটি জিনিস মিশে থাকে… অভিমান , হতাশা  ও আত্মবিশ্বাসের অভাব।  আর কারণগুলোর জন্যে দায়ী

  •  প্রেমে ব্যর্থতা
  •  মা-বাবা এবং ছেলে-মেয়ের মধ্যে মনোমালিন্য,
  •  পরীক্ষায় ব্যর্থতা,
  •  দীর্ঘস্থায়ী রোগের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া,
  •  স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য,
  •  যুদ্ধক্ষেত্রে কিংবা অন্য কোন সময় শত্রুর  কাছে ধরা না দেয়ার চিন্তা
  •  কোন কারনে প্রচন্ড মানসিক আঘাত প্রাপ্তি
  •  বেকারত্ব
  •  যুদ্ধের নির্মমতা কিংবা অন্য কোন নির্মম কোন ঘটনা

আসলে বলতে গেলে আত্মহত্যার অনেক কারন খুঁজে বের করা যাবে সম্ভবত আপনি যে কারনে এই আজিব সিদ্ধান্ত নিবেন ভাবছেন এর মধ্যে পাওয়া যাবে। আসুন দেখা যাক প্রকৃত পক্ষে কি হওয়া উচিত বা কি করা দরকার।

সাধারণত একজন মানুষ আত্মহত্যার পথ তখনই বেছে নেন যখন সে বেঁচে থাকার প্রায় শেষ সম্ভাবনাটুকু হারিয়ে ফেলেন এবং নিজের জীবনকে মূল্যহীন ও অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করেন।

প্রেমে ব্যর্থতাঃ

গত ৩ বছর ধরে কারো সাথে আপনার মনের দহরম মহরম চলছে  । হঠাৎ করেই আপনার প্রিয় মানুষটির বিয়ে হয়ে গেল বা অন্য কোন কারনে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে। প্রচন্ড পরিমাণে আঘাত পেয়েছেন তাই না। এবং মানুষ হলে  তা’ই হবার কথা । আর যদি সেটি না ঘটে তাহলে সম্ভবত এটা প্রেম নামক অভিধানে ফেলা যাবে না কি হতে পারে আমি জানি না । কয়েকদিন ধরে ঘুম হচ্ছে না খাওয়া দাওয়া বন্ধ তাই না। একাকী নিজেকে বন্দি করে রেখেছেন।  কারো কথা ভাল লাগছে না বা কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অজর ধারায়। গত কয়েক বছরের স্মৃতিগুলো ভিড় করছে ক্ষণে ক্ষণে । প্রতিশ্রুতিগুলোও বার বার মনে পড়ছে। কই কিছুই সে মনে রাখল না। আচ্ছা কান্না করছেন তো কাঁদুন। বার বার ভাবছেন আপনি তাকে ছাড়া অচল এই তো। জীবনের মানে হারিয়ে ফেলেছেন তো। এত দিনের দেখে আসা স্বপ্নগুলো চুরমার হয়ে গেল। থাকতে পারছেন না  আর জীবন প্রদীপ টেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে তাই না । লোকজন জানার ফলে সম্মান হারানোর ভয় করছেন কিংবা পরিবারের লোকজন কি না কি বলে  সর্বশেষ পন্থা হিসেবে ভাবছেন কিভাবে আত্মহত্যা করা যায় তাই না।

আত্মহত্যা মোকাবেলা

এই হ্যালো আপু/ভাইয়া আপনাকেই বলছি এইবার শুনুন, আপনার প্রিয় মানুষটি আপনাকে ছেড়ে গিয়ে কিন্ত থাকতে পারছে তাই না তাহলে আপনি কেন পারবেন না। কই কিছুই তো হয় নি তার, তাহলে আপনি এত কান্না-কাটি করে ভাসিয়ে ফেলে কি লাভ হচ্ছে যেন ? বা ধরলাম জোড় করে বা পরিবারের কথা চিন্তা করেই বিয়ে হয়ে গেল তো এখন কি ফেরত আসবে ? তাহলে কেন আপনি নিজের উপর অত্যাচার করে চলেছেন বা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাচ্ছেন। এখন ধরলাম আপনার বয়স ১৬-২৫ এর মধ্যে। এত বছর ধরে আপনি পরিবারের কম বেশি ভালবাসা পেয়ে আসছেন। মাত্র ২-৪ বছর বা একটু বেশিই এই কত দিনের ভালবাসার জন্যে আপনার পরিবারের এত দিনের ভালবাসাকে অবজ্ঞা করে চলে যাবেন ? আপনার মা-বাবা এত দিন ধরে লালন-পালন করেছেন অন্তত তাদের প্রতি আপনার কিছুটা হলেও কিন্ত কর্তব্য রয়েছে আমার তো তাই মনে হয়।  আর একটা কথা জীবন কিন্ত একটাই গেলে আর ফেরত পাবেন না , প্রমাণিত সত্য  ! ! ওহে ভাই শুনুন দেখা গেছে ১০ বছরের সম্পর্কও টিকে না, চারপাশে দেখুন এই রকম আরো অনেক উদাহরণ পাবেন যারা আপনার থেকে আরো বেশি সিরিয়াস ছিল উনারা দিব্যি বেঁচে আছেন। বেঁচে থাকার অনেক কারন আছে ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখেন,   আপনি দেখিয়ে দিন না যে আপনিও পারছেন তাকে ছেড়ে থাকতে, ধরলাম চলে গেলেন তাহলে কি হল আপনার উনি তো ঠিকই আছে । উনি তো আপনার জন্যে চলে যাচ্ছে না দুনিয়ার মায়া ছেড়ে  !!  বরং দিব্যি সুখেই আছেই । তাহলে এই ছেলে/মেয়ের জন্যে আপনি চলে যেতে চাচ্ছেন , ব্যাপারটা কেমন হাস্যকর হয়ে গেল না ?
এইবার বলি কষ্টটাকে পুঁজি করে আবার বেঁচে থাকার কারন গুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করুন। দেখুন ঠিকই আপনি বেঁচে থাকার পক্ষেই মত দিবেন কিন্ত কষ্ট পিছু ছাড়ছে না এই  তো। আসুন দেখি  আপনার কষ্টটা কিছুটা দূর করা যায় কিনা যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি। জীবনটা আপনার বেঁচে থাকার তাগিদ আপনার, যা করার আপনাকেই করতে হবে আমি হয়ত এযাবত কালে মানুষের ব্যবহার করা কিছু পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাকে অবহিত করব মাত্র।

দেখুন উপরে একটা লাইন সবুজ কালারের মার্কিং করা। হ্যাঁ এটাই মূল কারন যে আপনি পারছেন না আর টেনে সামনে নিয়ে যেতে। প্রথমেই আপনাকে এই দিকে দৃষ্টিপাত করতে হবে। খেতে হয়ত মন চাবে না বা ঘুম আসবে না চেষ্টা করতে হবে অন্তত মনের বিরুদ্ধে যেতেই হবে আপনাকে এখানে । ভালভাবে বেঁচে থাকার এই দুইটার কোন বিকল্প নাই। কখন কান্না আসে  বা কখন আত্মহননের চিন্তা আসে জানেন? আপনি যখন নিজেকে একা করে ফেলেন তখনই নিজেকে ছোট ছোট লাগে নিজের কাছে নিজেকে অসহায় মনে হয়।  তাই বলা নিজেকে কখনোই একা হতে দিবেন যথা সম্ভবত। বন্ধুদের সময় দিন , বন্ধু না থাকলে বন্ধু বানান তাদের সাথে আড্ডা দিন। প্রয়োজনে সামাজিক যোগাযোগ মাধম্যে প্রচুর সময় দিন।  আর পরিবার তো আছেই সময় কাটানোর জন্যে, যদি ভাতিজা ভাতিজী থাকে তাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকুন। মোট কথা যতটা সম্ভব নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। যা করতে ভাল লাগে তাই করুন মুভি দেখুন , ভাল কিছু ইংরেজী সিরিয়াল আছে (Prison Break ,Arrow, Robocop, Game of Thrones, Sherlock, Intelligence ইত্যাদি ) সেগুলো দেখুন, বই পড়ুন, পিসিতে গেম খেলুন বা ইনডোর/আউট ডোর যে কোন গেম খেলুন ,সাইকেল চালান, ঘুরতে চলে যান কোথায়।  পরিবারে সবাই হয়ত মন খারাপ করতে পারে কিন্ত সেটা সাময়িক এটা পরিবার যেখানে আগেও আপনার বিপদে পাশে ছিল এখনো থাকবে আমি বা আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীরা নাও থাকতে পারি। আর লোকের কথা ভাবছেন দেখা যায় কম বেশি সবার জীবনে এই রকম ছোট/বড় কোন ঘটনা থাকে।

হ্যাঁ  আর যে কাজ গুলো করতেই হবে আপনাকে তা হলঃ তার সব ফোন নাম্বার ফেলে দিন ভুলেও মিস কল বা কল দিতে যাবেন না কষ্ট হলেও, সব ম্যাসেজ ফেলে দিন, যদি রেকর্ড করা ভয়েজ থাকে সব ফেলে দিন, পুরানো স্মৃতি  হিসেবে ধরে রাখা ছবিগুলো শুধু দুঃখই বাড়াবে ফেলে দিন সব, উপহারগুলোও কাছে রাখার দরকার নেই নষ্ট করে ফেলুন বা কাউকে দিয়ে দিন, ফেসবুকে ব্লক মারুন তার আইডি,  তাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়া রেস্টুরেন্টের ধারে কাছেও যাওয়ার দরকার নাই, আর তাকে নিয়ে সময় কাটানো স্থানগুলোও সম্ভব হলে পরিহার করুন, বিরহের গান কোন ভাবেই শোনা উচিত না যদি ফোনে থেকে থাকে তাহলে ফেলে দিন আর বেশি মানুষের সাথে  এই ব্যাপারটা শেয়ার করে সহানুভূতি চাওয়াটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।

আমি জানি আপনি সহজে ব্যাপারটা ভুলতে পারছেন না । তাতে কি চলুন না এটাকে জীবনের পাশাপাশি  রেখেই এগিয়ে যাই। এক সময় দেখা যাবে এটাও চলবে আপনার সাথে কিন্ত আপনার চলার গতি থেকে একটু পিছিয়ে পড়েছে।

ধরে নিলাম আপনি উপরে বর্নিত  উপায়গুলোর বেশির ভাগ জিনিসগুলো পালনের চেষ্টা করছেন  হয়ত। সবগুলো পারবেন না তারপরেও চেষ্টা করবেন সবগুলো পালন করার তাহলে অবশ্যই আপনি শোকটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন। হয়ত এই আত্মহত্যা প্রবণতা কাটাতে সময় লাগতে পারে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস /দুই মাস । তবে যেহেতু মনস্থির করে ফেলেছেন আপনাকে আত্মহত্যা করা থেকে ফিরে আসতে হবেই তো  যত কঠোরভাবে উপরের উপায়গুলো পালন করবেন কথা দিচ্ছি তত তাড়াতাড়ি আপনি এই কঠিন দুর্দশা থেকে মুক্তি লাভ করবেন। মনে রাখতে হবে কোন ভাবেই আত্মবিশ্বাস হারানো চলবে না। হয়ত এক মাস পালনের পরে আপনি বিরক্ত হয়ে যেতে পারেন তারপরেও চেষ্টা করতে হবে।

মা-বাবা এবং ছেলে-মেয়ের মধ্যে মনোমালিন্যঃ  আপনি মা-বাবার আদরের সন্তান কোন কারনে একদিন প্রচন্ড ঝগড়া হয়ে গেল তাদের সাথে । সাথে করে আপনার অভিভাবক আপনার পুরানো ভুলের ঝাঁপিগুলো খুলে বসেছে। হ্যাঁ এইবার এইবার নিজে উপর চরম পরিমানে হতাশ আপনি কিছু মনস্থির করতে পারছেন না। নিজের উপর প্রতিশোধ নিবার আকাংক্ষা চরম আকারে ভর করেছে তাই তো। ওকে জনাব/জনাবা অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এটা শুধুমাত্র কয়েক ঘন্টা এর পরে স্বাভাবিক সব ঠিক আগের মত। আচ্ছা আপনিই ভেবে দেখেন না আপনার অতিতের ঘটনাগুলো উনারা কিন্তু সহজেই ভুলে  সব ক্ষমা করে দিয়েছেন । বরাবরের মত এবারও ক্ষমার পাল্লার দিকেই যাবেন উনারা। একটা উদাহরন দেই, ধরুন প্রিয় বন্ধুর সাথে ঝগড়া করলেন  চরমভাবে । এখন কি করবেন জানেন আপনি তার অতিতের ভুলগুলো তুলে ধরেন ঠিক কিনা এবং সেটা স্বাভাবিক ভাষায় তো অবশ্যই না। তাহলে আপনার অতিপ্রিয় মা-বাবা দোষটা করেছে কোথায় ? চিন্তাটা মাথায় নিয়ে তার পরে মরা চিন্তা করিয়েন। এত বছর ধরে আপনাকে লালন-পালন করেছে এটার ব্যাপারটা অন্তত নিজের কাছে ক্লিয়ার করে যাওয়া ভাল তারা কি অন্তত আপনার কাছ থেকে কোন কিছুরই কি দাবিদার হতে পারবে না ?

পরীক্ষায় ব্যর্থতাঃ পরিক্ষায় খারাপ করার অভিজ্ঞতা কার নাই এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল বলে মনে করি। খারাপ হলেই বাসায় এল ইচ্ছামত কঠোর কথা শুনতে হয় । এমন কি দেখা যায় টিনেজ ছেলে-মেয়েকে শারিরীকভাবে পর্যন্ত লাঞ্ছিত হতে দেখা যায় । তাই পরিক্ষার খারাপ করার পরে  বিশেষ করে  কিছু মেয়ে সবার কথা শুনার চেয়ে চলে যাওয়াটাকে সামনে নিয়ে আসে। পরিনামে আরেকটি তাজা প্রাণ সহজেই ঢলে পড়ে।
আমারও পরিক্ষায় খারাপ রেজাল্ট হত প্রায়ই। কি করতাম অনুমান করুন তো। আমি ঐ দিন আড্ডাবাজী আর খেয়ে বাসায় আসতাম। কারন জানা কথা বাসায় আসলে আমাকে সার্ফেক্সেল দিয়া ধুয়া নিশ্চিত। মনে মনে প্ল্যান করে আসতাম যা বললে এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে গায়েব করে দিব। দেখা যেত ৭০-৭৫ হজম হয়ে যেত । বাকিটা তো জলবৎ তরং। মাত্র দুই চার ঘন্টা গেলেই সবাই আগের মত ব্যবহার করত। অবশ্য মাঝে পরেও স্মরণ করিয়ে দিত। এটা আমি কেয়ারই করতাম না। ভাবতাম আব্বা-আম্মু এত কষ্ট করছে আমাদের জন্যে আর দুই চারটা কথা শুনাতে পারবে না ! ! এবার চিন্তাটা আপনার কি করবেন। 🙂

 

দীর্ঘস্থায়ী রোগের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়াঃ  শরীতে গ্যাংগ্রীন ধরেছে, কিংবা ক্যান্সার বা এইডস অথবা অন্য কোন দীর্ঘস্থায়ী অসুখ।  এর প্রভাবে দেখা যায় মানষিক যন্ত্রনা থেকে আপনি আত্মহত্যার চিন্তাটা মাথায় নিয়ে এসেছেন।  অনেক সময়ই এ রকম হয়। কথা হচ্ছে ডাক্তার অনেক সময় বলে রোগিকে হাসপাতাল থেকে বাসায় নিয়ে যান আমাদের আর কিছুই করার নাই । এমন সব ক্ষেত্রে অনেক সময়ই দেখা যায় মরা তো দূরে কথা দিব্যি আরাম  করে আরো ২০-২৫ বছর বেচে গেল।  মানুষ তার ভবিষ্যতের এক ইঞ্চি সামনেও দেখতে পায় না । কে নিশ্চয়তা দিতে পারে পরের ভাগ্যবান যে আপনি হবে না।

স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য:  এটা স্বাভাবিক ঘটনা। দাম্পত্য জীবনে চলা ফেরা করতে গিয়ে দুজনের মন মালিন্য হবেই। আর দীর্ঘ মেয়াদে কোন দিন দেখা যায় ঝগড়াতে রুপ নেয়। এটা অস্বাভাবিক কিছুই না। দু’জনের মনে হয় ও একটু ছাড় দিতে পারল না । আর এই ঝগড়াতে অতিতের ছোট ছোট ভুলগুলো উঠে আসে যা খুবই কষ্টকর। যখন প্রচন্ড পরিমাণ হতাশ হয়ে পড়েন তখন আত্মহত্যা নামক বাজে শব্দটি মাথায় চেপে বসে। সব কিছু তখন অর্থহীন মনে হয়। এটা কিন্ত সহজ একটা কাজ। এবং অতিরিক্ত সহজে  নিজের দায়িয়ত্ব থেকে পালিয়ে বেড়ানোর জন্যে। চলে যান তাতে আমাদের কি কিন্ত প্রশ্নগুলো উত্তর নিজের কাছেই পরিষ্কার করে যান। আপনি তো বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন একজন মানুষ না হলে আপনার বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না তাই না। আপনি কি আপনার আত্মীয়-স্বজনকে ঝামেলায় ফেলে যাচ্ছেন না । এত দিনের প্রিয় মানুষটাকে কি নিজের মৃত্যুর জন্যে দুনিয়ার মানুষের কাছে অপরাধী বানিয়ে যাচ্ছেন না ? আপনার যদি সন্তান থাকে তাদের প্রতি যে আপনার একটা দায়িত্ব ছিল সেটা কি পালন করে যেতে পেরেছেন ? সবচেয়ে বড় কথা দুনিয়াতে আপনাকে একটা বিশেষ স্থানে পাঠানো হয়েছে সেই জায়গাটা শূন্য করা যাবার আপনার কোন অধিকার নাই।
একটু সময় নিয়ে ভাবুন তার পর আশা করি নিজে থেকেই উত্তর পেয়ে যাবেন।

যুদ্ধক্ষেত্রে কিংবা অন্য কোন সময় শত্রুর  কাছে ধরা না দেয়ার চিন্তাঃ  বড় বড় যুদ্ধগুলোতে লক্ষ করলে দেখবো পরাজিত সৈনিকগন প্রায়ই দেখা যায় শত্রু সেনার হাতে ধরা পরে অমানুষিক নির্যাতনের ভয়ে আত্মহত্যা করে বসে । অথবা গুপ্তচরেরা ধরা পরার ভয়ে আত্মহননের পথে পা বাড়ায়। এদের ক্ষেত্রে আসলে কিছুই বলার নাই কারন আপনাদেরকে নিয়োগকর্তারা সেইভাবেই ট্রেইনিং প্রদান করেছেন।

 কোন কারনে প্রচন্ড মানসিক আঘাত প্রাপ্তিঃ  কারো দ্বারা অপ্রত্যাশিত শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত হওয়া বা যৌন হয়রানীর ভয়ে প্রায়ই দেখা যায় টিনেজ বয়সে অনেক ছেলে মেয়ে সর্বনাশা পথ বেছে নেয় । বিশেষ করে কিশোরী মেয়েগুলোর এই পরিস্থিতিতে পড়তে হয় প্রায়ই সেটা যখন সহ্য সীমার বাইরে চলে যায় তখন কাউকে না বলেই সে নিজের জীবনকে নষ্ট করে দিতে চায়। এর কারন মেয়েটা লজ্জায়-ভয়ে কাউকে কিছুই বলতে পারে না আবার নিজের সীমিত জ্ঞানে দিয়ে এর সহজ কোন সমাধানও খুঁজে পায় না। তখন বাধ্য হয়েই বাজে কাজটার প্রতি ঝুঁকে পড়ে। আচ্ছা আপু এত লজ্জা পাবার কি আছে পরিবার হচ্ছে সবচেয়ে বড় নিরপত্তা প্রদানের প্রতিষ্ঠান একবার বলেই দেখুন না। আর একটা কথা অন্য একটা ফালতু ছেলের ভয়ে কেন নিজের জীবনের বিনাশ করতে চাচ্ছেন। এটা তো কাম্য হতে পারে না যে  আপনি এই সব ছোট খাট ব্যাপারগুলোর ভয়ে হতাশ হবেন। চলতে ফিরতে সবারই এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এটাকে পাশাপাশি রেখেই এগিয়ে যেতে হবে। এটাই জীবন।

যুদ্ধের নির্মমতা কিংবা অন্য কোন নির্মম কোন ঘটনাঃ  ইরাক, আফগান, ভিয়েতনাম যুদ্ধ এমনি ঐতিহাসিক যুদ্ধের ইতিহাস হাতড়ালেই দেখব অনেক সৈনিক যুদ্ধের নির্মমতা সহ্য না করতে পেরে যুদ্ধ ক্ষেত্রেই আত্মহত্যা করে এবং এমন  কি যুদ্ধ পরবর্তিতে দীর্ঘ মেয়াদে যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে সহ্য না করতে পারে আত্মহত্যা করে ফেলে । ইরাক আর আফগান যুদ্ধ ফেরত অনেক মার্কিন সৈনিক নিজের জীবন থেকে ভয়াবহতা গ্লানি মুছে ফেলতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে ফেলেন আনন্দ চিত্তে। এ ক্ষেত্রে বলা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনাকে একজন ভাল সাইকোলজিস্ট দেখাতে হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তত তাড়াতাড়ি

 

যদি মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে  তো জানেনই যে আত্মহত্যাকে ইসলামে নিষেধ করা হয়েছে ,

“আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। এবং যে কেউ জুলুম করে, অন্যায়ভাবে উহা (আত্মহত্যা) করবে, অবশ্য আমি তাকে অগ্নিদগ্ধ করবো, আল্লাহর পক্ষে উহা সহজসাধ্য।” (সূরা-নিসা-২৯-৩০)

অন্যান্য ধর্মেও আত্মহত্যাকে নিরুৎসাহী করা হয়েছে।

মানুষ সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ট  সৃষ্টি, মানুষের  সৃষ্টি যেমন সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় ঘটেছে তেমনি তাদের মৃত্যুও সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় ঘটবে সেটাই স্বাভাবিক।  জীবনে দুঃখ-কষ্ট থাকবেই। থাকবে নানা প্রকার বাধা-বিপত্তি ও প্রতিকুল পরিবেশ। এসব জয় করতে পারাই হল  মানুষের কর্তব্য ও কাজ, এইসব প্রতিকুল পরিবেশ থেকে মুক্তি পাবার জন্যে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া অন্যায় ও মানব ধর্মের বিরোধী।  যদি কেউ মনে করেন যে কোনো কারণে মানসিক কষ্টের মধ্যে আছেন, তবে সে সমস্যা গোপন না করে তা বিশ্বাস করা যায় এমন কারো সাথে আলোচনা করুন । সমস্যাগুলো আলোচনা করা হলে আপনি নিজেই যেমন অনেকটা মানসিক ভারমুক্ত হবে, তেমনি  সমস্যা সম্পর্কে জেনে তাকে সঠিক পথ প্রদর্শনও সহজ হবে।  তথ্য-প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার এই যুগে মোবাইল ফোন ও সামাজিক যোগাযোগের সাইট যেমন ফেসবুক , টুইটার, ইন্সট্রাগ্রাম  এগুলোর মাধ্যমে অপরিচিত কারো সাথে সম্পর্কে না জড়ানোই ভাল, কারণ এতে প্রতারিত হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। এটা ঠিক সবার জীবনে কোন না কোন সময় ব্যর্থতা আসবে, আসবে সফলতাও, কিন্তু ব্যর্থতার ফলশ্রুতিতে আত্মহনন কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বরং তার মুখোমুখি হয়ে সমস্যার সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে । আর মনে রাখতে হবে ব্যর্থতা না থাকলে সফলতার স্বাদ উপলদ্ধি করা যায় না তাই ব্যর্থতা শব্দটা আছে।

সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্যে আত্নহত্যা কোনক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়। আত্নহত্যার মাধ্যমে নিজের জীবনকে ধ্বংস করে দেওয়ার কোন মানে হয় না। নিজের জীবনের প্রয়োজনীয়তা  আপনাকেই বুঝতে হবে। আত্মহত্যার পক্ষে যতই অকাট্য যুক্তি থাকুক না কেন এযাবত পৃথিবীর কোন সমাজই আত্মহত্যাকে গ্রহণ করেনি । আসুন আমরা সবাই আত্মহত্যাকে না বলি।

মনজু
 

Click Here to Leave a Comment Below 0 comments

Leave a Reply: