ব্যাকপ্যাকিং ক্যাম্পিং চেক লিস্টঃ যেখানে রাইত সেখানে কাইত তত্ত্ব
ব্যাকপ্যাক ট্যুরের ক্ষেত্রে প্রায়শই আমরা যে সম্যায় পড়ি তা হল , ট্যুরে গমনের পরে দেখা যায় প্রয়োজনের সময় সিম্পল কিছু টুলস আনা হয় নি। যে কারনে খুব হ্যাসেলে পড়তে হয়। খুব বিরক্ত লাগে নিজের উপরই তখন। এ সমস্যায় যাতে কারো পড়তে না হয় তাই আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে এই আর্টিকেলের অবতারনা।
শুধু মাত্র ব্যাপ-প্যাক না অন্য যে কোন ট্যুরের চেক লিস্ট এই বিবরনী থেকে ধারনা পেতে পারেন। শীত, গ্রীষ্ম বা ঋতু ভেদে চেক লিস্ট থেকে সতর্কতার সহিত প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নির্বাচন করতে পারেন।
আমি প্রো লেভেলের ট্রাভেলার না। খুব অল্প অভিজ্ঞতা রয়েছে ক্যাম্পিং নিয়ে। সেই ক্ষুদ্র জ্ঞানের অংশ হিসেবে এই ক্যাম্পিং চেক লিস্ট তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
বহনকারী সামগ্রী
১। ব্যাকপ্যাক/ ট্রাভেল ব্যাগ- (Backpack/Travel Bag) : ব্যাকপ্যাক ক্যাম্পিং এর প্রথম শব্দটাই ব্যাকপ্যাক। এটি একটি অবিচ্ছেদ্ধ অংশ। ব্যাকপ্যাক ট্যুরের ক্ষেত্রে ব্যাকপ্যাক কিনার ক্ষেত্রে খুব সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
২। ড্রাই ব্যাগ- (Dry Bag) : গুরুত্বপুর্ণ ইলেকট্রনিক্স বা গিয়ারগুলো পানি থেকে বাঁচাতে অবশ্যই ড্রাই ব্যাগ নেওয়া উচিত। এটি একটি পানিরোধী স্টোরেজ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।
৩। জীপার ব্যাগ- (Zip Lock bag) : একদম ছোট্ট যেমন মোবাইল ফোন, জিপিএস ইত্যাদি জিনিসগুলো বাঁচাতে জীপার ব্যাগ খুব কাজের একটা জিনিস। ড্রাই ব্যাগ থেকে বার বার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো খুলতে বিরক্ত লাগতে পারে তাই জীপ লক ব্যাক রাখা আপনি খুব উপকৃত হবেন।
৩। পলিথিন-(Polythin) : কোন কারনে ড্রাই ব্যাগ বা জীপ লক নিতে না পারলে অবশ্যই আমাদের পলিথিন রাখতে হবে যথেষ্ট সংখ্যক। প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রনিক্সগুলো ভাল মানের একটা পলিথিন মুড়িয়ে পানিরোধী করতে পারি খুব সহজেই। হাতের কাছে রাখতে হবে এমন যন্ত্রপাতিগুলো যেমন মোবাইল, কম্পাস বা এই টাইপের জিনিসগুলো মুড়িয়ে নিতে পারি। এ ছাড়া অন্যন্য জিনিসগুলোও পলিথিনে মুড়িয়েও পানীরোধী নিরাপত্তা দিতে পারি।
নির্দেশনা বা নেভিগেশন সামগ্রী
১। ম্যাপ- (Map): যে এরিয়াতে যাবে অবশ্যই সেই এরিয়ার ম্যাপ নেওয়ার চেষ্টা করব যদি সম্ভব হয়।
২। কম্পাস- (Compass): ভ্রমণকারীদের একটি অবিচ্ছেদ্দ অংশ হল কম্পাস। এটি আপনাকে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে বা কোন বিশেষ দিক খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। নামায পড়তে গিয়ে পশ্চিম দিক নিয়ে চিন্ত করা থেকে মুক্তি দিবে । অনেকে মোবাইলের এপস ব্যবহার করেন। মোবাইলের এপসটা নির্ভরযোগ্য না যতটা ম্যানুয়েল কম্পাস আপনার উপকারে আসবে।
৩। জিপিএস -(GPS) : জিপিএস থাকলে অবশ্যই বহন করা উচিত।
৪। নির্দিষ্ট এরিয়া নিয়ে সম্মক জ্ঞান (knowledge about the selected area) : যে এরিয়াতে যাবেন ক্যাম্পিং বা ট্যুরে সেই এরিয়ার ম্যাপ দেখে সম্যক জ্ঞান নিয়ে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ।
৫। র্যুট নথি -(Route description) : যেখানে যেভাবে যেতে চান কোথায় কিভাবে যাবেন সেগুলো লিখে নিতে পারেন। হয়ত ফোনের ম্যাপে দেখে যাবেন ভাবছিলেন কিন্ত বাংলাদেশের মোবাইল ইন্টারনেটের যা অবস্থা প্রয়োজনের সময় নাজেহাল হবার সম্ভাবনাই বেশি।
আশ্রয় বা শেল্টার সামগ্রী
১। তাবু-(Tent) : যেহেতু ব্যাকপ্যাকে তাহলে এই জিনিসটা নিতে হবেই। তবে সিজন বুঝে তাবু বহন করতে করতে হবে। বর্ষাকালে গেলেন কিন্ত নিয়ে গেলেন শীত উপযোগী তাবু তাহলে কিন্ত খুব নায়েস ফিল হবে। 😛
২। স্লীপিং ব্যাগ- (Sleeping Bag): ঘুমানোর জন্যে স্লিপিং ব্যাগ নিতে হবে। কোল্ড ওয়েদার চাড়া যদি ভ্রমণ করেন তাহলে চাদর দিয়ে কাজ সেড়ে নিতে পারেন।
৩। গ্রাউন্ড শীট – (Ground sheet): এই জিনিসটা নিতে অবশ্যই ভুলবেন না। ঠান্ডা মাটি কিংবা ভেজা মাটি থেকে আপনাকে পরিত্রাণ দিবে।
৪। হ্যামক – (Hammock): ব্যাকপ্যাকে এই জিনিসটার কথা না বললেই নয় । চাইলে ল্যাটাইলেন ব্যাপারটা খারাপ না । হুম কয়েকটা প্রোফাইল ছবিও পেতে পারেন। 😉
৫। ছাতা -(Umbrella ) : রোদ কিংবা বৃষ্টি যাই হোক এই ছোট্ট জিনিসটা আপনাকে খুব সাহায্যে আসবে। চাইলে বহন করতে পারেন।
রান্না সামগ্রী
১। স্টোভ বা চুলা -(Stove ): রান্না জন্যে তো অবশ্যই চুলা বহন করতে হবে।
২। জ্বালানী -(Fuel): চুলার ধরন অনুযায়ী কেরোসিন বা অন্য কোন জ্বালানী সামগ্রি অবশ্যই অবশ্যই বহন করতে হবে।
৩। প্লেট, মগ , চামচ- (Plate, Mug, Spoon): খেতে হলে তো নিতে হবে না খেতে চাইলে নেওয়ার দরকার নেই। 😛
৪। লাইটারঃ আগুন জ্বালানোর জন্যে লাইটার বা ম্যাচ বহন করতে হবে । তবে ট্রেডিশনাল বারুদের ম্যাচ বহন থেকে বিরত থাকুন।
৫। প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী – (Necessary Food item): যত দিন থাকবেন ততদিনের প্রয়োজনীয় খাবার সামগ্রী যেমন লবন, তেল, প্রয়োজনীয় মশলা, বিস্কিট (স্ন্যাক্সের জন্যে) ইত্যাদি প্যাকেট করে নিন।
পোষাক-পরিচ্ছদ
পোষাক যত কম নেওয়া যায় ততই ভাল। ব্যাকপ্যাকের ওজন বাড়িয়ে দিবে এই জিনিসগুলো। তবে পোষাক নিতে গিয়ে শীত আর গরম কালীন সময় বিবেচনায় রাখতে হবে। পর্যায়ক্রমে আমরা সে দিকে আলোকপাত করব। সাধারন ভাবে যে পোষাকগুলো নিতে হবে সেগুলো হলঃ
১। গামছা – (Towel): এই পরিচ্ছেদের অত্যাবশ্যকতা সবাই জানে আশা করি। রোদ থেকে বাঁচাতে যেমন সাহায্য করবে তেমনি ঘাম বা অন্য কিছু ক্ষেত্রে উপকারী একটা জিনিস। ইভেন একে আপনি চাইলে লুঙ্গি হিসবে ব্যবহার করতে পারবেন। 😛
২। লুংগি / শর্টস- (Lungi/shorts): রাতে ঘুমানোর জন্যে আপনি যেটিতে আরামবোধ করেন সেটি নিতে পারেন।
৩। অন্তর্বাস (Under wear): প্রয়োজনীয় অন্তর্বাস নিতে অবশ্যই ভুলবেন না।
গরম অনুযায়ী পোষাকঃ
১। হাফ স্লীভ টি শার্ট -(Half sleeve T-shirt): ট্যুরে আমাদের টি শার্ট না হলেই নয় । তবে গরম কালে চেষ্টা করব সিনথেটিক বা জার্সি টাইপ হাফ হাতা টি শার্ট নেওয়ার ।
২। লং স্লীভ শার্ট বা টি শার্ট -(Long sleeve shirt/t-shirt): রোদ বা পোকা মাকড় থেকে বাচার জন্যে ফুল হাতা কাপড় ক্যারি করতে পারেন।
৩। রোদ চশমা-(Sun glass): সূর্যের প্রখরতা থেকে চোখ বাঁচাতে অবশ্যই রোদ চশমা বহন করা উচিত।
৪। হ্যাট/ ক্যাপ -(Hat/ Cap): আপনার পছন্দ অনুযায়ি হ্যাট/ ক্যাপ নিতে পারেন।
৪। বৃষ্টিরোধী পরিধেয় -(Rain wear): রেইন কভার, রেইন কোট নেওয়া যেতে পারে।
৫। স্যান্ডেল -(Sandle): ২০০ টাকার প্যাগাসাস কিনতে নিতে পারেন বা এই মানের বার্মিস স্যান্ডেল।
শীত অনুযায়ী পোষাক
১। লং স্লীভ টি শার্ট/ শার্ট -(Long sleeve t shirt/shirt): ভারী ফুল হাতা টি শার্ট/ শার্ট নিন।
২। কম্বল (Blanket): শীতের ধরন অনুযায়ী অবশ্যই অবশ্যই কম্বল ক্যারি করতে হবে ।
৩। মোজা -(Shocks): শীত কালে ভ্রমণের জন্যে অবশ্যই মনে করে ভারী মোজা নিতে হবে।
৪। গ্লভস -(Gloves): শীত হতে সুরক্ষার জন্যে অবশ্যই গ্লভস ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখুন।
৫। জ্যাকেট/ভেস্ট -(Jacket/vest): শীত কালে এই জিনিসটার উপকারীতা আশা করি কাউকে স্মরন করিয়ে দিতে হবে না।
৬। রেইন কোট -(Rain coat): প্রচন্ড শীতে যখন জ্যাকেটে শীত মানবে না এর উপরে একটি রেইন কোট পড়ুন । নিজে পরবর্তিতে এটি বহনে সোচ্চার হবেন।
৭। মাংকি ক্যাপ (Monkey Cap): শীত থেকে কান বাঁচাতে খুবই উপকারী একটি পরিচ্ছদ।
৮। ক্যাডস/ বুট -(Boot): শীতে প্রকোপ থেকে বাঁচতে শীতের ধরন অনুযায়ী বুট/ ক্যাডস পড়ে নিন।
টয়লেট্রিস সামগ্রী
১। হ্যান্ড স্যানিটাইজার -(Hand Sanitizer): অনেক সময় দেখা যায় পানি অভাবে কিংবা ব্যস্ততাতে হাত ঠিকমত ধোয়া হয় না। স্যানিটাইজার এই সমস্যার সমাধান করে । পানি ছাড়াই জীবাণুমুক্ত । হাত ধোয়া ছাড়াই খেতে পাড়ছেন । আমি সব সময় ক্যারি করি যদিও। 🙂
২। টুথ পেস্ট-টুথ ব্রাশ -(Tooth paste-tooth brush): অন্যকে নিজের মুখের সুগন্ধ না বুঝতে দিলে অবশ্যই ক্যারি করুন। 😛
৩। টয়লেট পেপার -(Toilet Paper): এই জিনিসটা অনেকেই ভুলে বহন করতে ভুলে যায় বাট এর অভাব বোধ করে ট্যুরে গিয়ে।
৪। সাবান / পরিষ্কারক সামগ্রী/শ্যাম্পু -(soap/ cleanse): জীবানু নাশক সাবান আর কাপড় পরিষ্কারক হিসেবে পাউডার বহন করতে পারেন। এ ছাড়া চাইলে শ্যাম্পু নিতে পারেন।
৫। মেয়েলী জিনিসপত্রঃ আপনি যদি মেয়ে হোন অবশ্যই প্রয়োজনীয় সামগ্রী বহন করবেন , মনে রাখবেন ট্যুরে আনন্দ করতে যাচ্ছেন সাজুগুজু করতে নয় তাই অবশ্যই প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাদে অতিরিক্ত সামগ্রি বহন পরিহার করুন।
৬। ওডোমস -(Odomos): মশা থেকে বাচতে অবশ্যই ওডোমস কিনে আগেই ব্যাগে রেখে দিন।
৭। সানস্ক্রিম (Sun cream): অনিন্দ সুন্দর চেহারা বাঁচাতে নিতে পারেন। আমার মত আফ্রিকান কালার হলে দরকার নাই। 🙁
পানি সংক্রান্ত সামগ্রী
১। পানির বোতল-(Water bottle): প্রয়োজনে একটার বদলে দুইটা পানির বোতল নিন । কারন পানি অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রি।
২। পানি পরিষ্কারক (Water purifier): যথেষ্ট পরিমান পানি পরিষ্কারক নিন। কিছু না পেলে অন্তত ফিটকিরি নিন। কয়েক ঘন্টা পানি ভিজিয়ে উপর থেকে পানি ফিল্টার করে নিতে পারেন।
মেডিকেয়ার
রিপেয়ার কিট
প্রয়োজনীয় ইলেক্ট্রিক সামগ্রী
লাক্সারী আইটেম
অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস
